ফেব্রুয়ারির ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র।
সূত্রটি বলেছে, আজ লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তিনি (তারেক রহমান) প্রধান উপদেষ্টাকে আগামী রমজানের আগেই ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণের আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখে মধ্যে নির্বাচন করার আয়োজনের আশ্বাস দেন।
এ ছাড়াও নাম গোপন রাখার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ১০ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে পারে। ১৫ ফেব্রুয়ারির পরে রমজান শুরু হবে। সুতরাং এই তারিখের পরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আজকের ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্বের আপাতত অবসান ঘটল। লন্ডনে একটি হোটেলে তাদের প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছায় দুই পক্ষ। উভয়পক্ষই নিজ-নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি ভোটের সিদ্ধান্তে যান।
বিগত কয়েক মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে বিএনপির পক্ষে আগামী সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার জন্য বারবার আহ্বান জানানো হয়। প্রথমদিকে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলে আসছিল। পরে গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ড. ইউনূস বলেছিলেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএনপি। দলটি ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকে। যার ফলে, নির্বাচন, সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে সরকার এবং বিএনপির দ্বন্দ্ব চরম মাত্রায় পৌঁছায়।
আরও পড়ুন
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের মাধ্যমে সেই দ্বন্দের আপাতত অবসান ঘটল।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর তারেক রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। এরপর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকটি সত্যিকার অর্থে একটি টানিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। এই বৈঠকে পর একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে- দুই নেতার বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকের আলোচনা বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধান ছিল আগামী নির্বাচনের ইস্যু। সেখানে তারেক রহমানের প্রস্তাব ছিল, আগামী রমজান মাসের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের। কারণ এপ্রিলে যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছিল সেটা উপযুক্ত সময় নয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন পেছানোর জন্য সম্মত হয়েছেন… তারা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।
এদিকে ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, এই বৈঠকে আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যে ফলপ্রসূ ঐকমত্য হয়েছে, তা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দেশের মানুষের জন্য এনেছে স্বস্তির বার্তা, নতুন আশার আলো।
তিনি আরও বলেন, পুরো বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংযোগ ঘটিয়ে এপ্রিলের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত সময় থেকে সরে এসে নির্বাচনের জন্য একটি যৌক্তিক সময়সীমা নির্ধারণের জন্য প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। তিনি জনগণের প্রত্যাশা উপলব্ধি করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন — যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবার আগে বাংলাদেশ— এই নীতিকে হৃদয়ে ধারণ করে তারেক রহমান বরাবরের মতোই প্রমাণ করেছেন, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের এই সৌহার্দ্য ও সহমতের মধ্য দিয়ে জয় হবে গণতন্ত্রের, জয় হবে বাংলাদেশের, জয় হবে জনগণের। এখন প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার নিজ অবস্থান অটুট রেখে আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করবে।
এএইচআর/এমএ
