জুলাই-আগস্ট উদযাপনে নাস্তিক্যবাদী দর্শন চলবে না : জালালুদ্দীন

ফ্যাসিবাদ পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সরকার ঘোষিত মাসব্যাপী স্বাধীনতা অনুষ্ঠানমালায় শাহবাগপন্থী নাস্তিক্যবাদী দর্শনের প্রতিফলন চলবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেছেন, আমরা ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের শহীদদের স্বীকৃতি, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
শুক্রবার (২৭ জুন) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার যৌথ আয়োজিত মুসলিম ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি করেন। এছাড়া দেশব্যাপী এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন
জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইসরায়েল এখন শুধু ফিলিস্তিন নয়, ইরানেও সরাসরি আগ্রাসন চালিয়ে মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব ও সম্মানকে চ্যালেঞ্জ করছে। ইরান সাহসিকতা ও ন্যায়ভিত্তিক প্রতিরোধের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে- অন্যায়ের জবাব একমাত্র সম্মিলিত প্রতিরোধেই সম্ভব।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। জাতিসংঘ, ওআইসি সবই নিষ্ক্রিয়। মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক জোট ছাড়া আমাদের রক্ষার পথ নেই।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ইসলামী শক্তিগুলোর ঐক্য এখন সময়ের দাবি। নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের ঐক্য না হলে দেশ, ইসলাম ও স্বাধীনতা তিনটিই বিপন্ন হবে। সরকার জনগণের ক্ষোভকে অবজ্ঞা করছে। যারা ফ্যাসিবাদী দমননীতির সহযোগী ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনুন।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাজী এবং সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাকিবুল ইসলাম।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন আমির মাওলানা মহিউদ্দীন রাব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ হাদী, মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবু হানিফ নোমান, যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আল আবীদ শাকির, ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন হাসিব প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিল পল্টন হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের মোড়ে গিয়ে সংগঠনের নায়েবে আমীর মাওলানা মহিউদ্দীন রাব্বানীর দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
সারাদেশে বিক্ষোভে উত্তাল খেলাফত মজলিস
সিলেট মহানগরে বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি মাওলানা ইকবাল হুসাইন এবং পরিচালনা করেন মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলার সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম জালালী। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক এমপি মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী।
চট্টগ্রাম মহানগরে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের উত্তর গেট থেকে মিছিল বের হয়ে জিইসি মোড়, দামপাড়া হয়ে শেষ হয়। সভাপতিত্ব করেন মাওলানা ইমদাদুল্লাহ সোহাইল এবং পরিচালনায় ছিলেন মাওলানা রিদওয়ানুল ওয়াহেদ। বক্তব্য দেন মাওলানা এনায়েতুল্লাহ, মাহবুব, এরশাদুল আলম মাসুদসহ যুব ও ছাত্র মজলিসের নেতারা।
গাজীপুর মহানগরে চান্দনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল বের হয়ে প্রধান সড়ক ঘুরে শেষ হয়। সভাপতিত্ব করেন মাওলানা ফারুক আহমদ নোমানী। প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান। বক্তব্য দেন কাজী নিজাম উদ্দিন, ছিদ্দিক আহমেদ শেখ, মাওলানা আবু হানিফ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরে ডিআইটি মসজিদ থেকে মিছিল শুরু হয়ে প্রেসক্লাব চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মামুনুর রশীদ। মৌলভীবাজার সদরে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন মাওলানা ইসমাইল আলী, ইমদাদুর রহমান, হিফজুর রহমান হেলাল ও ইসলাম উদ্দীন।
নেত্রকোনা, মাদারীপুর ও শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন জেলাতেও পৃথক বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়। শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ে চত্বরে বক্তব্য দেন মাওলানা আবুল কাশেম আজাদী, হাফেজ রায়হান, হিফজুর রহমান হেলালী প্রমুখ।
এছাড়াও কর্মসূচি পালিত হয়েছে খুলনা, রংপুর, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, ফেনী, মানিকগঞ্জ, বরগুনা, নাটোর, কুমিল্লা, মাগুরা, রাঙ্গামাটি, সুনামগঞ্জসহ দেশের বহু জেলা ও উপজেলায়।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনে করে- ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসন, ফিলিস্তিনে গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক শক্তির নীরবতা মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে গভীর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। এই চক্রান্ত মোকাবেলায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সাহসিকতা ও সুসংগঠিত প্রতিরোধই একমাত্র পথ।
/এমএইচএন/এমএসএ