উদ্যানে জায়গা না পেয়ে আশপাশের এলাকায় জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা

দেশের অন্যতম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে ঢল নেমেছে নেতাকর্মীদের। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় জড়ো হচ্ছেন হাজারো নেতাকর্মী। গগণবিদারী ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে রাজধানীর অলিগলি হয়ে উঠেছে মুখর।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রেন, বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ট্রাকযোগে নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসে জড়ো হচ্ছেন।
দুপুরে শাহবাগ, কাকরাইল, মৎস্য ভবন ও টিএসসি ঘুরে দেখা গেছে, জামায়াতের হাজারো স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করছেন তারা। সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়েছেন দলের কর্মীরা।
রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতেও জামায়াত কর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তাদের অনেকেই কাঁধে ব্যাগ, হাতে দলীয় পতাকা ও স্লোগান লিখিত ব্যানার নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চ সাজানো হয়েছে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি ও দলের সাংগঠনিক বার্তা দিয়ে। দলের শীর্ষ নেতারা একে একে মঞ্চে আসছেন। ইসলামি সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশে ভিন্নমাত্রা যোগ করছেন দেশের খ্যাতিমান ইসলামি সংগীতশিল্পীরা।
দলটির নেতারা জানান, জাতীয় এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে ‘আন্দোলনের নতুন যাত্রা’ শুরু করতে চায় জামায়াত।
চট্টগ্রাম থেকে আসা মাহফুজুর রহমান নামে জামায়াতের এক কর্মী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে অংশ নিতে এসেছি। এই জমায়েত ইসলামপ্রিয় মানুষের ঐক্য ও প্রত্যয় প্রকাশ করছে।
তার মতে, এটি শুধুই একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় বরং একটি আদর্শিক অবস্থান তুলে ধরার দিন।

নড়াইল থেকে আসা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের আরেক কর্মী বলেন, এ সমাবেশ আমাদের জাতীয় ঐক্যের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে। দেশে ইসলামী হুকুমতের নতুন ধারা উন্মোচিত হচ্ছে। এটা ইসলামী রেনেসাঁরও একটি বার্তা বটে।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও নজর রাখছে অংশগ্রহণকারীদের গতিবিধির ওপর।
সাত দফা দাবিতে আয়োজিত জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে ইতোমধ্যে মানুষের ঢল নেমেছে। সমাবেশ শুরুর অনেক আগেই দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে প্রায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। উদ্যানের বাইরেও অবস্থান করছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।
নেতাকর্মীদের অনেকের হাতে তাদের দলীয় প্রতীক দাাঁড়িপাল্লা শোভা পাচ্ছে। দাঁড়িপাল্লা ও দলীয় মনোগ্রাম সম্বলিত টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি পরে এসেছেন হাজারো নেতাকর্মী।
এদিকে জাতীয় সমাবেশ সফল করতে দায়িত্ব পালন করছেন ২০ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক। ভোর থেকে সমাবেশের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন স্পটে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।
শনিবার ভোর থেকে হাইকোর্ট এলাকা, মৎস্য ভবন, শাহবাগ এলাকার বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবকরা সবাই একই ধরনের ড্রেস পরে বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নিয়েছেন। তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করছেন। কোন অঞ্চলের মানুষ কোন গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
মৎস্য ভবন স্পটের স্বেচ্ছাসেবক টিমের প্রধান মাসুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। পুরো রাজধানী জুড়ে আমাদের ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছে। শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে ভোর থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী প্রবেশ করতে দেখা গেছে জামায়াত নেতাকর্মীদের।
সাত দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন ও এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো এককভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করছে দলটি।
এমএম/এমএ