কাউকে বাদ দিলে ২৪-এর মতো একপেশে নির্বাচন হবে

কোনো দলকে বাদ দিলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের নির্বাচনের মতো একপেশে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে দলের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে কেউ লিডার অব দ্য অপোজিশন হতে চায়, কেউ সরকার গঠন করতে চায়, সেই ক্যালকুলেশন করে আমাদের উপর দায় দিয়ে এ দেশের নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। আপনারা এটা প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।
তিনি বলেন, আপনারা মনে করছেন কোনোমতে একটি ইলেকশন হয়ে গেলে সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে। আমরাও মনে করি নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকার গঠন করা যায় না। তবে নির্বাচনই কি একমাত্র উত্তর? মুসোলিনি, হিটলার তারা নির্বাচিত সরকার ছিলেন। তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। যেনতেন নির্বাচন হলে হবে না। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে, নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে, নির্বাচন ট্রান্সপারেন্ট হতে হবে।
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, মানুষকে যদি সম্পৃক্ত করতে না পারে, ২০২৪ সালে বিএনপিকে বাদ দিয়ে, জামায়াতকে বাদ দিয়ে যে নির্বাচন হয়েছিল সেখানে লোক আসেনি। আমি আপনাকে বলতে পারি এখনো লোক আসবে না এবং এই নির্বাচন একপেশে একটা নির্বাচন হবে। কারণ বর্তমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, এই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যদি নির্বাচন করতে যান, সে নির্বাচন কোনোদিন নিরপেক্ষ হবে না।
আরও পড়ুন
প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, যে প্রশাসনে পূর্ণভাবে পলিটিসাইজড হয়ে গেছে সে প্রশাসন দিয়ে আপনি কীভাবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন?
তিনি বলেন, আজ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নির্বাচন করছে, সেখানে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে উনি কি বিএনপিপন্থি না জামায়াতপন্থি না ছাত্রপন্থি। যেখানে আজ প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন তাদের সম্বন্ধে কথা হচ্ছে উনি কোন দলের। সুতরাং যে প্রশাসন দলীয়করণ হয়ে গেছে, সেই প্রশাসনের আন্ডারে আপনি নির্বাচন করতে পারবেন?
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, শিগগিরই নির্বাচন চাই, দেখেন প্রত্যেকটা জায়গায় কী হচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় ঘর দখল করছে, মামলা বাণিজ্য হচ্ছে। একদিকে আইন করছেন যে এমন মামলা নেওয়া উচিত হবে না, সম্পৃক্ত এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না, আরেক দিকে মামলা নিচ্ছেন। চাঁদাবাজি হচ্ছে, লুটতরাজ হচ্ছে, দখল হচ্ছে সেগুলো আপনারা বন্ধ করতে পারছেন না। আপনারা সেখানে নির্বাচন করার কথা কীভাবে ভাবছেন? আমি যখন এটা বলছি তার মানে আমি নির্বাচন চাই না তা নয়, আমি নির্বাচন চাই কিন্তু সেই নির্বাচন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এবং বিভিন্ন দল অংশগ্রহণ করে ২০১৪ সালের আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে আমরা আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিলাম। আমরা সেখান থেকে বেনিফিট পেয়েছি। এই কথাগুলো বলে আমাদেরকে জাতীয় যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে সেই প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার একটা চেষ্টা চলছে। যারা অভিযোগ দিচ্ছেন তারা সেই অভিজ্ঞতার চেয়েও বড় বড় অভিযোগের অভিযুক্ত বলে আমি মনে করি। জাতীয় পার্টি মনে করে কাউকে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যাব সেটা না। কারণ, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সবাইকে দরকার। সবাইকে আমরা সাথে নিয়ে এক সাথে এগিয়ে যেতে চাই।
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, ২০২৪ সালে আমরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কী সহযোগিতা করেছি? আমরা নির্বাচন করেছি। ২০০৮ সালে প্রত্যেকটা পার্টি নির্বাচন করেছে। জামায়াতে ইসলাম, বিএনপি এবং অন্যান্য দল সকলেই সেদিন নির্বাচন করেছে, আমরাও নির্বাচন করেছি। নির্বাচন যখন হয় তখন প্রত্যেকটা দল তার নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে। কার সাথে আমি নির্বাচন করব? আজ কী যারা মাঠে আছেন যেসব রাজনৈতিক দল, তারা কি নির্বাচনের জোটে যাচ্ছেন না? নির্বাচনের জোট কি কেবল আপনার আইডিয়োলজিক্যাল ভিত্তিতে হয়? জোট হয়? আইডিয়োলজি প্লাস আমার স্ট্র্যাটেজি কীভাবে আমি সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী আসন জয়যুক্ত হতে পারব।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আজ জামায়াতে ইসলাম করবে না জোট? কোথায় জামায়াতে ইসলাম? আর কোথায় হেফাজত? কোথায় ইসলামী আন্দোলন। আমরা সেরকম জোট করেছি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালের নির্বাচিত সরকারের অধীনে, সে সময় কন্সটিটিউশনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বদলানো হয়েছে। তখন বিএনপি-জামায়াত ওই পার্লামেন্টে ছিল, কই তারা যদি সেদিন পার্লামেন্ট থেকে রিজাইন করে বের হয়ে আসতেন তাহলে আজ বলতে পারতেন। সেদিন তো বিএনপি-জামায়াত পার্লামেন্ট থেকে বের হয়ে যায়নি। আর দোষ হয় জাতীয় পার্টির।
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, ২০১৪ সনে আমরা যে নির্বাচন করেছি সেটা ২০০৮ সালের একটা বৈধ নির্বাচিত সরকারের অধীনে। কন্সটিটিউশন অ্যামেন্ড করা হয়েছে, ইন প্রেজেন্স অব বোথ বিএনপি অ্যান্ড জামায়াতে ইসলাম। সেই ২০১৪ সালের নির্বাচিত সরকারের অধীনে আপনার স্থানীয় সরকার, সিটি কর্পোরেশন থেকে আরম্ভ করে উপজেলা, প্রত্যেকটা নির্বাচন আপনারা করেছেন। আপনারা প্রত্যেকেই করেছেন। তাহলে রিকগনিশন আমরা দিয়েছি ১৪ সালের নির্বাচিত সরকারকে?
আনিসুল ইসলাম বলেন, ১৪ সালের নির্বাচিত সরকারের অধীনে আপনারা নির্বাচন করেছেন, আপনারা বৈধতা দিয়েছেন। ২০১৮ সালে কেন নির্বাচন করলেন তাদের অধীনে? সব পার্টি এবং বিএনপি থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তারা তো পার্লামেন্ট বর্জন করেননি। তারা সেই পার্লামেন্টে, দোষ শুধু আমাদের। যে দোষ আমাদের ওপর দিচ্ছেন, সেই দোষের বড় ভাগীদার হচ্ছেন আপনারা।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়, এরা বিপ্লব করে না, এরা ভাঙচুর করে না। এরা নির্বাচন করে, পার্লামেন্টে যায়। পার্লামেন্টে গিয়ে যে সরকার থাকে সেই সরকারের বিরোধিতা করে। ২০১৪ সালে শুধু জাতীয় পার্টি নির্বাচন করেনি, অনেক করেছে।
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, জামায়াতে ইসলাম তাদের নেতৃত্বে কয়েকটা দফা দিয়েছে। তার মধ্যে একটি দফা হচ্ছে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। আমি আশ্চর্য হয়েছি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অনেকে অনেক সময় অনেক অভিযোগ এনেছেন। আমরা কিন্তু কোনোদিন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা বা পার্টি হিসেবে নিষিদ্ধ করা এইটা কখনো বলিনি। কখনো এইটাকে আমরা সাপোর্টও করিনি। জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার প্রক্রিয়াটা কিন্তু নতুন নয়।
জাতীয় সংসদ ছাড়া কোনো সংস্কার আইনি ভিত্তি পাবে না বলে মন্তব্য করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, সংস্কারের কথা বলছেন, কোনো কিছুই এগুলো হবে না। এগুলো করতে পারবে না। এগুলোর কোনো আইনি ফাউন্ডেশন থাকবে না। আপনি যে সংস্কারের কথা বলছেন, জোর করে উপর থেকে চাপিয়ে আপনি সংস্কার করতে পারবেন? এই সংস্কার জনগণকে নিয়ে করতে হবে। জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তাদের মাধ্যমেই একমাত্র এই সংস্কার। আমেরিকা থেকে আসা, লন্ডন থেকে আসা, বিদেশ থেকে আসা, বড় বড় পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে কোনো লাভ হবে না। তারা যদি ইলেক্টেড হয়ে পার্লামেন্টে যান ওয়েল অ্যান্ড গুড। এ দেশের শাসনভার আমাদের কনস্টিটিউশনে আমাদের সংবিধানে আছে, ইলেক্টেড মেম্বার্স অব পার্লামেন্ট।
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, সংবিধানের যে রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস আছে এগুলোর মধ্যেই তাকে কাজ করতে হবে। তার ইচ্ছামতো কোনো কাজ করতে পারবে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল ইসলাম বলেন, আমরা জোটবদ্ধ নির্বাচন করব, তবে কার সাথে জোট করব তা এখনো ঠিক করিনি।
এএইচআর/এসএসএইচ