২৮ অক্টোবরের ঘটনা দেশের ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায় : শফিকুল ইসলাম মাসুদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা শুধু একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়, বরং বাংলাদেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়, যা আজও জাতির জন্য গভীর শিক্ষা বহন করে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত ‘২৮ অক্টোবর প্রেক্ষিত : লাশতন্ত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অতিথি বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
মাসুদ বলেন, প্রায় ২০ বছর পর আজ আমরা উন্মুক্ত পরিবেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সেদিন যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন– তাদের প্রতি আমরা আজ গভীর শ্রদ্ধা জানাই। কারণ সেই দিন ন্যায়বিচারের দাবি তুলতে গিয়েই আমাদের অসংখ্য ভাই গ্রেফতার হয়েছিলেন, অনেকে প্রাণ দিয়েছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, সেদিনের ঘটনায় শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা হিসেবে এক নম্বর আসামি করে মামলা হয়েছিল, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ তদন্ত ছাড়াই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। তারা তখন লাশতন্ত্রের পাশে ‘ভয়তন্ত্র’ তৈরি করেছিল–দেশে আতঙ্ক ও দমননীতি প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০০৬ সালের ঘটনাকে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত করে জামায়াত নেতা বলেন, আমরা ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ছাত্রজনতার সম্মিলিত প্রয়াসে ভয়তন্ত্রের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। হয়তো অনেক ভাই শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, কিন্তু আমরা ভয় পাইনি। সেই ১২ ঘণ্টার যুদ্ধে আমাদের হাতে ছিল কাঠের লাঠি, আর তাদের হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। একজন হাফেজ ভাই মৃত্যুর আগে বলেছিলেন–‘আমার মুখে আঘাত করবেন না, এই মুখে আমি কোরআন ধারণ করেছি।’ কিন্তু তারা ইট দিয়ে তার দাঁত ভেঙে দিয়েছিল। এমন পৈশাচিকতা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব দেখেছে।
তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকার যখন তুলনামূলক সুনামের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল, তখনই আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা কখনো গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা ছাড়ে না, আবার কাউকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতায় আসতেও দেয় না।
মাসুদ দাবি করেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ১৩ জন এবং সারাদেশে ৩৩ জন জামায়াত–শিবির কর্মী শহীদ হন, আড়াই শতাধিক আহত হন। ‘তাদের মূল টার্গেট ছিল আমাদের সৎ ও জনপ্রিয় মন্ত্রীরা– যারা দুর্নীতিমুক্তভাবে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছিলেন। আর মঞ্চে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামির বক্তব্য চলাকালে পাশের ভবন থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়।’
তিনি বলেন, নিজামী ভাইকে তখন আমরা বলেছিলাম বক্তব্য বন্ধ করুন, কিন্তু তিনি বলেছিলেন—‘আমার একজন সহকর্মী যদি জীবন দিতে পারে, তবে আমার জীবন তার চেয়ে দামি নয়।’ সেই বৃষ্টির মতো গুলির মাঝেও তিনি বক্তব্য শেষ করেছিলেন।
শফিকুল ইসলাম মাসুদ অভিযোগ করেন, তারা যখন আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়, তখন ক্ষমতায় এসে ‘ট্রাইব্যুনাল’ নামের মাধ্যমে বিকল্প হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। তারা বাংলাদেশকে মানবিক রাষ্ট্র হতে দেয়নি, বরং প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের উপনিবেশে পরিণত করার চক্রান্ত করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আমাদের ভাইদের রক্ত দিয়েই ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। তাই আজ সরকারের উচিত তাদের শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি। আমি নিজে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় শুনেছি– তিনি ভিডিও কলে নির্যাতনের দৃশ্য দেখতে চেয়েছিলেন। একজন অফিসার আমাকে জানিয়েছেন, এই ভিডিও না দেখলে তিনি শান্তি অনুভব করতেন না। এমন একজন মানুষ ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করেছে, যা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
ডাকসুকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাদের প্রতি ছাত্রসমাজের যে অগাধ আস্থা, তা যেন কখনো ব্যর্থ না হয়। ২০০৬ সালে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে পল্টনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজও আপনারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না। কেউ আপনাদের ভালো কাজ আড়াল করতে চেষ্টা করবে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিবেকই সত্যের পাশে দাঁড়াবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।
এসএআর/বিআরইউ