বক্তব্যের ব্যাখ্যা আপনাকে দিতে হবে : সিইসিকে জামায়াত আমির

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। হাদির ওপর বেদনাদায়ক কাপুরুষোচিত আক্রমণের কারণে গোটা দেশবাসী যখন দারুণভাবে ব্যথিত, সবাই সমবেদনা জ্ঞাপন করছে, এমন প্রেক্ষাপটে সিইসির বক্তব্য সব মানুষকে আহত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি জায়গায় থেকে বর্তমানে কার্যত বাংলাদেশ এই কয়টা দিন যাদের নিয়ন্ত্রণে চলবে, সেই নির্বাচন কমিশনের প্রধানের আজকের বক্তব্য জাতির সামনে এসেছে। জাতি তার এই বক্তব্যকে মোটেই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। অথচ তিনি আছেন একটি নিরপেক্ষ জায়গায় বসে। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আপনার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা আপনাকে দিতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ‘মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, আমরা তার জীবন নিয়ে দারুণভাবে শঙ্কিত। আজকে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, জানি না আল্লাহ তাআলা তার কপালে, কিসমতে, ভাগ্যে কী লিখে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি, আল্লাহ তো মৃতকেও জীবিত করতে পারেন।
আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, আপনি (সিইসি) বক্তব্য দিয়ে জাতির মনে যে দুঃখ সৃষ্টি করেছেন, এই দুঃখ দূর করার দায়িত্ব আপনার। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, আপনি যে সেনসিটিভ জায়গায় এখন দায়িত্ব পালন করছেন, এই জায়গায় দায়িত্ব পালনের জন্য আপনি উপযুক্ত ব্যক্তি। এটা আপনাকেই প্রমাণ করতে হবে।
তিনি সিইসিকে অনুরোধ করে বলেন, দেরি না করে তিনি যেন তার বক্তব্যটি জাতির সামনে স্পষ্ট করেন। তাহলে জাতি তার ব্যাপারে যদি কোনো দুঃখ পেয়ে থাকে, হয়তো দূর হবে। না হয় জাতি সিদ্ধান্ত নেবে। দুটোর যেকোনো একটা হবে।
সিইসিসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের সবার কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আপনারা কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো আচরণ এই জাতির সঙ্গে করবেন না। সব জায়গা থেকে আমরা দায়িত্বপূর্ণ আচরণ দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আজকে অনেকের পদত্যাগের ব্যাপারে দাবি উঠেছে। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা পদত্যাগ নয় বরং দায়িত্ব পালনের যোগ্য, এটাও আপনারা প্রমাণ করুন। যদি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন, মনে রাখবেন ৫ আগস্ট বারবার ফিরে আসবে। কিন্তু এটা আমাদের কামনা নয়। কেনই বারবার এই জাতি জীবন দেবে? কেন রক্তের ফুলে খেলা হবে? আমাদের কামনা হচ্ছে আগামীর একটি ঐক্যবদ্ধ মানবিক দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের বাংলাদেশ। যেই তরুণরা বিজয় এনে দিয়েছে, আমরা এই বাংলাদেশ তাদের হাতে তুলে দিতে চাই। এজন্য আজকে তরুণরা টার্গেট। এজন্য আজকে বিপ্লবীরা টার্গেট।
তিনি দুষ্কৃতিকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এভাবে কাপুরুষোচিত হামলা করে দু-একজন মানুষকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র তোমরা করছ জাতিকে ভয় দেখানোর জন্য, তোমাদের প্রত্যেকটি বুলেটের আঘাত এই জাতিকে নতুন করে জীবন দেবে। অতএব সাবধান। যদি ভালো হয়ে যাও ভালো, যদি ভালো না হও, তাহলে এই জাতি তার প্রয়োজনীয় পাওনা সবার কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
জেইউ/এমজে