বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশে ‘বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হোক। অন্তত দূতাবাসে সাংস্কৃতিক শাখা স্থাপন করে বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার (৩ মার্চ) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ‘প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশ নেন কানাডার আলবার্টার ম্যাকুইয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এইচ এম আশরাফ আলী, সংগীতশিক্ষক রনি প্রেন্টিস রয় ও টরন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের বাংলার শিক্ষক আরজুমান্দ জলিল।
এসময় ড. এইচ এম আশরাফ আলী বলেন, যে ছেলে-মেয়েরা একাধিক ভাষা এবং সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত, শিক্ষাজীবনে তাদের ফল অন্যদের চেয়ে ভালো হয়। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের গবেষণায় এটি প্রমাণিত। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় নিবিড় মনোযোগ প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুদের মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে।
তিনি বলেন, কানাডার প্রতিটি শহরেই বাংলাদেশিদের জন্য বাংলা স্কুল খোলা এবং বাংলা সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে আসা উচিত। এজন্য কানাডা সরকারের নানা তহবিল আছে। খরচের যোগান যখন কানাডা সরকার দিচ্ছে, তখন বাংলা চর্চায় আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? তবে এ সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
রনি প্রেন্টিস রয় বলেন, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি বিকাশের জন্য দেশে দেশে পৃথক সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কানাডায় চাইনিজ কালচারাল সেন্টার, ভারতীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র আছে। বাংলাদেশ সরকারও কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অন্তত দূতাবাসগুলোতে সাংস্কৃতিক শাখা হতে পারে।
তিনি বলেন, কানাডায় এ পর্যন্ত দিবসভিত্তিক সংস্কৃতি চর্চার মধ্যেই আমরা আটকে আছি। এর বাইরে বাংলা সংস্কৃতিকে মূলধারায় নিয়ে যাওয়ার তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া দরকার। কয়েকটি গান, কবিতা আবৃত্তি শেখার মাধ্যমেই বাংলা সংস্কৃতি চর্চা হয় না।
লায়লা আরজুমান্দ জলিল বলেন, এখানে অনেক শিশুর মধ্যেই বাংলা ভাষা শেখার যথেষ্ট আগ্রহ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের বই দিয়ে শেখাতে গেলে তারা তেমন আগ্রহ পায় না। ফলে শিক্ষা উপকরণ একটি সমস্যা তৈরি করে। টরন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন স্কুলে বাংলা শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সব ক্লাসে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, স্কুল থেকে অভিভাবকদের স্পষ্ট করেই বলে দেওয়া হয়, আপনার শিশুদের ইংরেজি শেখানোর চেষ্টা করবেন না। বরং আপনারা নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি শেখান। ঘরে অভিভাবকরা পুরোপুরি বাংলায় কথা বললে শিশুরা সেগুলো সহজেই শিখে ফেলে।
‘নতুনদেশ’র সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, নাগরিকদের ট্যাক্সের অর্থে কানাডার ফেডারেল ও প্রভিন্সিয়াল সরকার অভিবাসীদের নিজ নিজ ভাষা সংস্কৃতি চর্চার জন্য তহবিল বরাদ্দ দেয়। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলা সংস্কৃতিকে মূলধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
তিনি বলেন, টরন্টোর ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডে বাংলা ক্লাস থাকলেও সেখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। মহাদেব চক্রবর্তী নামে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি নিজে অর্থায়ন করে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা কোর্স চালু করেছিলেন। কিন্তু সেটি টিকিয়ে রাখা যায়নি। টরন্টোয় এতো বাংলাদেশি বসবাসের পর এ ধরনের চিত্র কমিউনিটির জন্য লজ্জাজনক।
আরএইচ