রাসূল সা. স্বামী হিসেবে যেমন ছিলেন

ইতালির ভেনিসে নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী ভিত্তিক আলোচনা ‘সিরাতে রাসূল সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিবাসী আলেমদের উদ্যোগে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মেসত্রের মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের হল রুমে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ভেনিসে আলেমদের উদ্যোগে এবারই প্রথম এমন সিরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এই সিরাত সম্মেলনে কয়েকশ অভিবাসী মুসলিম অংশ গ্রহণ করেন। সম্মেলনটি দুই পর্বে ভাগ করা হয়। এতে উপস্থাপনা করেন হাফেজ আবদুস সালাম ও আব্দুল আজিজ।
দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে বয়ান করেন মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আরিফ মাহমুদ। স্ত্রীদের সঙ্গে নবীজির আচরণ ও স্বামী হিসেবে নবীজি কেমন ছিলেন- এ বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
আরও পড়ুন
আলোচনায় মাওলানা আরিফ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক সময়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন, যখন নারীকে মানুষ বলে গণ্য করা হতো না। মেয়ে শিশুদের জীবিত মাটি চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হতো। নারীর জন্মকে লজ্জা মনে করা হতো। সেই সমাজে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলেন, নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তখন সবাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। তাদের কাছে 'নারীর অধিকার' কথাটা নতুন ছিলো। তারা মনে করতো- নারীর আবার অধিকার কী? নারী তো শুধুই ভোগ্যপণ্য।
সিরাত সম্মেলনের আলোচকরা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো স্ত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচারণ করতেন না। গালমন্দ করতেন না। স্ত্রীরা, ঝগড়া করলেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বোঝাতেন। ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করতেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পারিবারিক জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, সুখী সংসারের জন্য পুরুষের সবথেকে বেশি দায়িত্বশীল হতে হয়। পুরুষের ধৈর্য, শরিয়ত সম্মত উদারতা বেশি থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে নবীর উম্মতেরা কথায় কথায় স্ত্রীদের উপর রেগে যান, গালমন্দ করেন। স্ত্রীদের ছোট ছোট ভুলগুলোও ক্ষমা করতে পারেন না। প্রতিক্রিয়া দেখান। যা কোনো ভাবেই প্রিয় নবীর শিক্ষা নয়।

আমাদের প্রিয় নবীর শিক্ষা হলো স্ত্রীদের 'ভালোবাসা' দিয়ে বোঝানো। ভুল হলে তাদের কাছে 'সরি' বলা। তাদের মূল্যায়ন করা। সম্মান রেখে কথা বলা। কিন্তু নবীর উম্মতরা মনে করেন, রাগ করার অধিকার শুধু স্বামীদের। স্বামীদের কোনো ভুল হয় না। স্বামীরা 'সরি' বলে না। যা প্রিয় নবীর শিক্ষার ঠিক বিপরীত।
বক্তারা আরও বলেন, আমাদের প্রিয় নবীর একজন স্ত্রী একবার রাগ করে তরকারির পেয়ালা ছুড়ে ফেলেছিলেন নবীর সামনে। প্রিয় নবী তার উপর রাগ দেখাননি, তাকে গালমন্দ করেননি। বরং তার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, সঠিক মূল্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু নবীর উম্মতেরা মনে করেন, আমাদের নবীর স্ত্রীরা সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতেন। জি হুজুর, জি হুজুর করতেন। কিন্তু না, তারা স্বামী হিসাবে নবীর সঙ্গে সাধারণ নারীদের মতোই আচারণ করতেন, রাগ করতেন, অভিমান করতেন, পরিমিত ঝগড়া করতেন, সম্মানের সঙ্গে সংসারও করতেন। বিপরীতে নবী প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, তাদের মূল্যায়ন করতেন, ভালো কাজের প্রশংসা করতেন।
তারা আরও বলেন, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কেমন আচারণ করতে হবে, তাদের কী কী অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, এ বিষয়ে প্রিয় নবী শুধু উপদেশই দেননি, নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।
আলোচনার শেষ দিকে বক্তারা বলেন, পাশ্চত্যের এই ঘুণে ধরা সমাজে পারিবার ঠিক রাখতে হলে, পারিবারিকভাবে সুখি হতে হলে, সবাইকে নবীর সিরাত জানতে হবে। সবার আগে নিজের পরিবারে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সম্মেলনে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করেন, ভিচেন্সার আল জান্নাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হুদা মাহবুব, মেসত্রে পুরান মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রাজ্জাক, মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আরিফ মাহমুদ, ইয়েজলো জামে মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা জাকির হোসাইন ও মেসত্রে পুরান মসজিদের সাবেক ইমাম মাওলানা আব্দুল কাদের। বাদ এশা বারক বিতরণের মাধ্যমে সম্মেলন শেষ হয়।
এনটি