কানাডায় জিনবিজ্ঞানী ডক্টর আবেদ চৌধুরীকে সংবর্ধনা

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বর্তমান বিশ্ব হুমকির মুখে। বায়ুমণ্ডল গ্রিন হাউজ গ্যাস শোষণ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটায়, যা মোকাবিলায় পতিত ও কৃষি জমিতে সারা বছরের জন্য পঞ্চব্রীহি ধান লাগানোর বিকল্প নেই– এমন কথাই উঠে এসেছে কানাডার ক্যালগেরির ডাউনটাউনের হিলটন হোটেলের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত গবেষক ও লেখক সিলেটের ড. আবেদ চৌধুরীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের আলোড়ন সৃষ্টিকারী পঞ্চব্রীহি ধান উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তনে বিশাল অবদান রাখায় কানাডার এম সি জি কলেজের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত হয়েছেন জিনবিজ্ঞানী ডক্টর আবেদ চৌধুরী।
কোনো রাসায়নিক ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির ধানের মিশ্রণ ঘটিয়ে পাঁচ রকমের ধান গাছ আবিষ্কারের ভূয়সী প্রশংসা করেন অনুষ্ঠানে আগতরা।
বাংলাদেশের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় যুগান্তকারী এই ফলন পদ্ধতির উদ্ভাবন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন কানাডিয়ান গবেষকরা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগামীতে কীভাবে এই উদ্ভাবন পদ্ধতি কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করা যায় তা ব্যক্ত করেন প্রখ্যাত এই বিজ্ঞানী।
এমসিজি কলেজের ডিরেক্টর অব অ্যাডমিশন ও মার্কেটিংয়ের রাইসা আফ্রিদার সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের ডিন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট টিম অগলিভি। এসময় উপস্থিত ছিলেন কলেজের সদস্য, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও প্রবাসী বাঙালিরা।

ক্যালগেরির এম সি জি কলেজের ডিরেক্টর অব অ্যাডমিশন ও মার্কেটিংয়ের রাইসা আফ্রিদা বলেন, আমরা বাংলাদেশের এমন একজন গুণী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা দিতে পেরে সত্যি গর্বিত। তার এই উদ্ভাবন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক এবং বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনুক, এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
ক্যালগেরির এম সি জি কলেজের ডিন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট টিম অগলিভি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার এই উদ্ভাবন পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করে কৃষিতে ক্রমাগত উন্নয়ন হবে, এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি এবং ভবিষ্যতে তার সঙ্গে আমরা কাজ করতে চাই।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই বাংলাদেশ কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। উদ্বৃত্ত খাদ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঋতু নির্ভরতা ধানের হাজার বছরের চরিত্র। পঞ্চব্রীহি ধানকে ঋতু নির্ভরতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এ ধান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, আমার এ আবিষ্কারের গবেষণাগার হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিলেটের একটি গ্রাম, যে গ্রামে আমি বড় হয়েছি। সেখানে আমার গবেষণার সহযোগী ছিলেন সেসব নিরক্ষর কৃষক, যাদের গায়ে লেগে থাকে বাংলার জল-কাদার গন্ধ। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ের গবেষণায় দিনরাত আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের বুকে মিশে আছে ধর্ম ও বিজ্ঞান। এসব নিরক্ষর, সরলপ্রাণ, দেশপ্রেমিক কৃষককে সঙ্গে নিয়ে আমি বিশ্বকে উপহার দিতে চাই উৎপাদনের শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞান। আমি বাণিজ্যিক উদ্দেশে আমার আবিষ্কারকে ব্যবহার করতে চাই না। আমি চাই, আমার এ আবিষ্কার বিশ্বের পাশাপাশি বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান বদলে দিক। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক আমার মাতৃভূমির মানুষের।
উল্লেখ্য, ড.আবেদ চৌধুরী ১৯৮৩ সালে পিএইচডি গবেষণারত থাকাকালীন ‘রেকডি’ নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেছিলেন, যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক চর্চা ও গবেষণা করা হয়। ২০১৯ সালে ড. আবেদ ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে এমন জাতের ‘রঙিন ভুট্টা’ উদ্ভাবন করে দেশবিদেশে সুনাম অর্জন করেন।
ড. আবেদ চৌধুরী মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামের একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
এসএসএইচ