কানাডায় ‘স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’কে ফিরিয়ে আনল শিল্পীরা

৫২ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়কার ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’টিই যেনো উঠে এলো কানাডার রাজধানী অটোয়ার কেন্টারবুরি হাই স্কুল অডিটোরিয়ামে। গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় অটোয়ার শিল্পীরা আয়োজন করেছিলেন ‘গানে ও আড্ডায় ফিরে দেখা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ শিরোনামে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের।
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র নিয়ে নতুন প্রজন্মের কৌতূহলমাখা প্রশ্ন আর সেই প্রজন্মের প্রতিনিধিদের জবাব, জবাবের সূত্র ধরে উত্তাল দিনের সেইসব গানগুলো মঞ্চে পরিবেশনা- সব মিলিয়ে যেনো একাত্তরেই ফিরে যাওয়া।
হলভর্তি দর্শক শ্রোতা বসে আছেন দর্শক সারিতে। হঠাৎ মাইকে বেজে উঠল ৭ মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের কয়েকটি পঙক্তি, যে পঙক্তিগুলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অবিরাম প্রচারিত হতো— ‘আর যদি একটি গুলি চলে…’।
পুরো অন্ধকারে ঢেকে থাকা অডিটোরিয়ামে তখন ‘ড্রামস অব লিবারেশন’র ধ্বনি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে। ’ড্রামস অব লিবারেশন’র ধ্বনির মধ্যেই আস্তে আস্তে সরে যায় মঞ্চের পর্দা, মঞ্চে তখন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সুর এবং অনুভূতিকে বুকে ধারণ করে অটোয়ার শিল্পীরা প্রস্তুত।
গতানুগতিক গীতিআলেখ্য নয়, নতুন প্রজন্মের মৌমিতা আর পিয়ার জিজ্ঞাসার সূত্র ধরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক কানাডিয়ান কূটনীতিক জুলফিকার সাদেক এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার রেজাউর রহমানের ৭১ এর ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা, আর তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান।
’জয় বাংলা বাংলার জয়’ দিয়ে শুরু আর জাতীয় সংগীত দিয়ে সমাপ্তি। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দর্শক শ্রোতাদের একাত্তরের রুদ্ধশ্বাস সময়ে আটকে রাখা। আর এই অসাধ্য সাধন করেছেন শিল্পী নার্গিস আক্তার রুবি, ফারজানা মাওলা অজন্তা, সঞ্জয় দাস, আরেফিন কবির. সুপ্তা বড়ুয়া, শিশির শাহন্ওয়াজ, নন্দিতা দাস, প্রসূন ধর, সাদী রোজারিও, শারমিন সিদ্দিক, রওনক জাহান উর্মি, অং সুই থোয়াই। শিল্পীদের যন্ত্রাংশে সহযোগিতা করেছেন, গিটারে অর্ণব দেওয়ানজী, কি বোর্ডে ফাহাদ কবির,তবলায় আলী আহমেদ রনি, হারমোনিয়ামে অং সুই থোয়াই, ইলেকট্রিক ড্রামে এম ডি তুষার প্রমুখ।
কানাডায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রতিভাকে একটি শৈল্পিক রূপরেখায় আবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে ওঠা ’ক্রিস্টাল ক্লিফ ইনকর্পোরেশনের’ এই আয়োজনের আরও একটি বৈশিষ্ট্য ছিল অটোয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আয়োজকদের নিষ্ঠা, শিল্পীদের পেশাদারিত্ব ৫২ বছর আগের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রকেই যেনো বাস্তবে নিয়ে এসেছিল।
এমএ