দক্ষিণ আফ্রিকা যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে কর্মী অপহরণের অভিযোগ

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশি সাঈদুল হককে সম্প্রতি কয়েক দফা অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় শাখা যুবলীগের সভাপতি বাদল মৃধা জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন একই দলের পদত্যাগকারী সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন বোখারী।
স্থানীয় সময় ৫ এপ্রিল (সোমবার) সকাল ৯টায় জোহানসবার্গের রেন্ডফন্টিনে নিজ দোকানে ঢুকে অপহরণকারী তিন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সম্প্রতি যুবলীগ থেকে পদত্যাগকারী প্রচার সম্পাদক সাঈদুল হককে (৩২) হাতে কুপিয়ে ও মাথায় আঘাত করে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। চলতি পথে গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় এক নারীর সহযোগিতায় তিনি বেঁচে ফেরেন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এর আগে, ২৯ ও ৩০ মার্চ সকালে দুইদিনে দুইবার সাঈদুল হককে তার বাসা থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে একই এলাকার রাস্তায় ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেই সময় দৌড়ে পালিয়ে বাঁচেন তিনি।
ওই ঘটনায় সাঈদুল হক স্থানীয় ক্রুগারডর্প পুলিশ স্টেশনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর (Krugersdorp ref nr CAS 719/3/2021)। মামলা দায়েরের চারদিনের মাথায় তৃতীয়বারের মতো অপহরণের শিকার হয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ফের ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে বাঁচেন সাঈদুল হক।
এর আগে, ২৯ ও ৩০ মার্চ তুলে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় সাঈদুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ দুই দিনে দুবার আমাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি দীর্ঘ ১১ বছর প্রবাস জীবনে কারো সঙ্গে রাজনৈতিক বা টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা তো দূরের কথা কারো সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়নি।
ওই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় শাখা যুবলীগের সভাপতি বাদল মৃধার সম্পৃক্ততা দাবি করে শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) রাতে তারই ব্যবসায়িক সহযোগী ও পদত্যাগকারী যুবলীগ নেতা শাহীন বোখারী ফেসবুক লাইভে এসে তাদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বলেন, ‘বাদল মৃধা আমাদের মেরে ফেলবে, আপনারা আমাদের বাঁচান। সেই আমাদের পেছনে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা আমাদের মেরে ফেলতে পারে। আমরা বর্তমানে আত্মগোপনে আছি।’
সেই ফেসবুক লাইভ সূত্রে শাহীন বোখারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রায় সাত-আট মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুকলভ মজুমদার, বাদল মৃধা, শাহীন বোখারী ও সাঈদুল হক এই চার বাংলাদেশি শেয়ারে একটি গ্রোসারি দোকান ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করেন। শুকলভ মজুমদারের ৮০ ভাগ শেয়ার, ২০ শতাংশ বাকি তিন জনের।
শাহীন বোখারী বাদল মৃধার দিকে অভিযোগ তুলে আরও বলেন, সেই দোকান নেওয়ার পর থেকে আচরণ ও অর্থনৈতিক কারণে বাদল মৃধার সঙ্গে বনাবনি না হওয়ায়, কয়েকবার কমিউনিটির আবু নাছের হাজারীসহ কয়েকজন মিলে দরবার করে তার অর্থ বুঝিয়ে দিয়ে শেয়ার থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টা বাদল মৃধা ভালোভাবে নেয়নি জানিয়ে শাহীন বোখারী বলেন, সে সময় বাদল মৃধা একাধিকবার আমাদের অপহরণ করে খুন করে ফেলার হুমকি দেয়। সেটা কমিউনিটির আবু নাছের হাজারীসহ অনেকেই জানেন। ওই ঘটনার জের ধরেই বাদল মৃধা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সাঈদুল হককে তৃতীয়বারের চেষ্টা তুলে নেয়। ওই অপহরণকারীরা আমাকেও খুঁজেছে। ঘটনার সময় আমি দোকানে না থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই।
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে অপহরণ-খুনের হুমকি বিষয়টি নিয়ে জানতে দক্ষিণ আফ্রিকা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কমিউনিটির দায়িত্বশীল আবু নাছের হাজারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল সেটা দরবারের মাধ্যমে সমাধান হয়েছিল। হুমকির বিষয়ে শাহীন বোখারীর অভিযোগের ভিত্তিতে বাদল মৃধাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন তিনি এমন কিছু বলেনি বলে জানিয়েছিলেন।’
সাঈদুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দোকানের ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয়ে বনাবনি হচ্ছিল না। পার্টনারশিপ থেকে বাদল মৃধাকে বের করে দিতে গেলে তিনি কয়েক দফা আমাদের হুমকি দিয়েছিলেন। বাদল মৃধা বলেছিলেন, দরকার হয় এখানে দুয়েকটা লাশ ফেলে দেব তারপরও আমি এই দোকান ছেড়ে যাব না।
সাঈদুল বলেন, আমরা মনে করেছিলাম মাথা গরম থেকে বাদল মৃধা এসব কথা বলছে। কিন্তু এখন দেখছি সত্যিই সে আমাদের পিছনে সন্ত্রাসী দিয়ে কয়েক দফা তুলে নিয়ে খুন করতে চেয়েছে।
তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে দুইটা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে জানতে দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা যুবলীগের সভাপতি বাদল মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা যুবলীগের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে এটা একটা রাজনৈতিক চক্রান্ত। একটা নোংরা রাজনীতি চলছে। শিগগিরই সত্য প্রকাশিত হবে।
দলীয় কর্মী ও সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনারদের অপহরণ ও খুন করে ফেলার হুমকি-ধামকির অভিযোগের বিষয় তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
ওএফ