পবিত্র মিরাজুন্নবী (দ.) ও গাউছুল আজম মাহফিলে মুসল্লির ঢল

প্রিয় রাসূল (দ.) এর পদাঙ্ক অনুকরণ ও অনুসরণ করে যেসব মনীষীরা ইতিহাসে সমুজ্জ্বল তাদের মধ্যে খলিফায়ে রাসূল (দ.) হযরত গাউছুল আজম (রা.) চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আজীবন যিনি শরিয়তের ওপর অটল-অবিচল ছিলেন, সুন্নাতে রাসুলের উপর সমস্ত কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। দুচোখের অশ্রু ছিল যার জীবনের অলংকার। আমানতদারীতায় এমন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব ছিলেন শুধু মুসলিমরাই নয় অমুসলিমরাও আস্থা ও ভরসার প্রতীক হিসেবে উনার কাছে আসতেন। এবাদত ও রিয়াজতে ছিলেন অনন্য, প্রিয় রাসূল (দ.) ছিলেন উনার ধ্যানে জ্ঞানে সর্বত্র।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিন-রাতব্যাপী চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের গাউছুল আজম সিটিতে অনুষ্ঠিত পবিত্র মিরাজুন্নবী (দ.) ও গাউছুল আজম মাহফিলে অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
পবিত্র মিরাজুন্নবী (দ.) ও সালানা ওরসে হযরত গাউছুল আজম (রা.) উপলক্ষ্যে ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলের জন্য বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে বাণী প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য এবং সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সালানা ওরসে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ ফোরকান মিয়া, প্রফেসর ড. জালাল আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ সরোয়ার কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। সালানা ওরসে বক্তব্য রাখেন মাওলানা মুহাম্মদ শফিউল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্যরা।
এদিন ফজরের নামাজের পর খতম শরীফ, মোরাকাবা, ঈছালে ছাওয়াব, মিলাদ-কিয়াম ও মোনাজাতের পর খতমে কুরআন আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ওরসের কর্মসূচি। পূর্ব ঘোষিত তারিখ থেকে মহিলা, প্রবাসী, তরিক্বতপন্থি ও উপস্থিত মুসলিম জনতা ২৪ হাজার ৭৮৪টি খতমে কোরআন ৮২১ টি খতমে তাহলীল এবং ১২৪ টি খতমে ইউনুস আদায় করেন। অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে সুমধুর সুরে কুরআন তিলাওয়াত, তাহলিল ও নিম্নস্বরে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ জিকির এবং নবী (দ.)-এর শানে দরূদ পাঠ। শুধু দেশের নয়, সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশে আসা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-মধ্যপ্রাচ্য, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কাগতিয়া দরবারের শত শত অনুসারী এতে অংশ নেয়।
সালানা ওরসে যোগদানের উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ডু, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া ছাড়াও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালী থেকে গাড়িযোগে কাগতিয়া দরবারের অসংখ্য অনুসারী, ভক্ত ও সাধারণ মুসলমানেরা সালানা ওরসে আসতে থাকে। চট্টগ্রাম ছাড়া ফেনী, কুমিল্লা, বি.বাড়িয়া, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকেও কাগতিয়া দরবারের হাজার হাজার অনুসারী ও মুসলমানেরা উপস্থিত হন। সালানা ওরসে যোগদানের জন্য শুধু দেশের নয়, বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সৌদি আরবসহ ওমান, কাতার, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ্ হতেও কাগতিয়া দরবারের অনুসারীরা সপ্তাহখানেক আগে থেকে বাংলাদেশে আসতে থাকেন। সালানা ওরস উপলক্ষ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলোকসজ্জিত করা হয়। মাগরিবের আগেই গাউছুল আজম কমপ্লেক্সের বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
পরিশেষে মিলাদ কিয়াম, প্রিয় রাসূল (দ.) ও খলিফায়ে রাসুল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রা.)-এর খুলছিয়তের ওসিলায় দেশ জাতির কল্যাণ, উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি এবং হযরত গাউছুল আজম (রা.)-এর ফুয়ুজাত কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে এবাদতের মহাকর্মযজ্ঞ সমাপ্ত হয়।
পিএইচ
