চীনা রকেট আঘাত হানতে পারে ইতালিতে, ১০ অঞ্চলে সতর্কতা
ইতালির ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানতে পারে চীনের রকেট ‘লংমার্চ ৫ বি’র ধ্বংসাবশেষ। এ নিয়ে দেশটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দেশটির মহাকাশ সংস্থার দেওয়া বিপজ্জনক এ তথ্যে চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ইতালির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, এরইমধ্যে ইতালির মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ১০ বিভাগের জনগণকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৮ ও ৯ মে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগণকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে চীনা নভোযানের ধ্বংসাবশেষ
এদিকে, এ বিষয়ে ৭ মে প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি জাতীয় জননিরাপত্তা সংস্থা সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইতালির স্থানীয় সময় শনিবার (৮ মে) দিবাগত রাত ২টা ২৪ মিনিটে চীনা লং মার্চের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে। তবে ধেয়ে আসা খণ্ডিত রকেটের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের সংঘর্ষ এবং সূর্যের প্রভাব জনিত কারণে সম্ভাব্য অঘটন ৬ ঘণ্টা আগে পরেও হতে পারে।
এর ফলে ইতালির মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সবকটি বিভাগে ‘এলার্ট’ জারি করে শনি-রোববার জনগণকে যার যার আবাসস্থলে ও অফিস ভবনে বদ্ধ জায়গায় থাকতে সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়। তবে চীনা রকেট ঠিক কোথায় আঘাত হানতে পারে তা এই মুহূর্তে সঠিক বলা যাচ্ছে না। ধারনা করা হচ্ছে বড় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ।
ইতালিয়ান সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট বলছে, সম্ভাব্য বিপজ্জনক এই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার যেকোনো ভবনের নিচের তলাসমূহ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হবে। আন্ডারগ্রাউন্ডে কংক্রিটের প্রশস্ত দেয়াল আছে এমন যেকোনো স্থান ও ভবনের পিলারের আশপাশের এলাকা তুলনামূলক নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে।
উল্লেখ্য, ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে উমব্রিয়া, লাসিও, আবরুসো, মোলিসে, কামপানিয়া, বাসিলিকাতা, পুলিয়া, কালাব্রিয়া, সিচিলিয়া এবং সার্দেনিয়া। এসব বিভাগের জনগণকে সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট যার যার অবস্থানে কাঁচের দরজা-জানালা থেকেও নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
পৃথিবীর কক্ষপথে নিজেদের মহাকাশ স্টেশন স্থাপণের উদ্যোগ নিয়েছে চীন। সেই মহাকাশ স্টেশনের নামও ইতোমধ্যে ঠিক করা হয়েছে- তিয়ানহে মহাকাশ স্টেশন। সেই মহাকাশ স্টেশনের একটি মডিউল (অংশ) পরীক্ষামূলকভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করতে গত ২৮ এপ্রিল ওয়েনচ্যাং স্পেস সেন্টার থেকে ‘লংমার্চ ৫ বি’ নভোযানটি উৎক্ষেপণ করেছিল চীনের মহাকাশ সংস্থা।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যম স্পেসনিউজের প্রতিবেদনে বলছে, নভোযানটি সফলভাবে মহাকাশ গবেষণা স্টেশনের মডিউলটিকে স্থাপনে সক্ষম হলেও নিজেকে আর গ্রাউন্ড স্টেশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি; ঘুরে চলেছে পৃথিবীর কক্ষপথে।
পাশাপাশি সেটির অভ্যন্তরের ১০০ ফুট লম্বা অভ্যন্তরীণ একটি অংশ মূল নভোযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিন কয়েকের মধ্যেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়তে চলেছে। রাডারে তা ধরাও পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নভোযানের ধবংসাবশেষটি এখন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে এবং এটি বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে ঢুকছে। যার মানে হল, এটি পৃথিবীর চারিদিকে বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে নীচের দিকে নেমে আসছে।
এদিকে সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় ইতালির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বর্তমান সংবাদটি ইতালিতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
এইচকে
