তুরস্কে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

তুরস্কের আংকারার বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়েছে।
দূতাবাসের সভাকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হয় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে। এরপর শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং তাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বাণী পাঠ করা হয়।
এরপর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ উপলক্ষ্যে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা পর্বে দিবসটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দূতাবাসের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা।
তিনি উল্লেখ করেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক ‘নিকোলাস টমালিন’ এর রচিত নিবন্ধ থেকে জানা যায় যে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ছিল মোট ১ হাজার ৭০ জন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় রমনা থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয় যার মামলা নম্বর ছিল ১৫। সেখানে আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানকে আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের বোন ফরিদা বানু।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে, যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করা।
আলোচনা অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ অংশ ছিল কবিতা পাঠ। এসময় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘সুপ্রভাত’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।
রাষ্ট্রদূত মো. আমানুল হক তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর শোক ও বেদনাবিধুর স্মৃতির দিন। তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।
তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছিল জাতির অস্তিত্ব ও অগ্রযাত্রাকে চিরতরে রুদ্ধ করার এক সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ কেবল ব্যক্তির এবং পরিবারের ক্ষতি নয়-এটি ছিল জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ ও যুক্তিবোধে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হবে তাদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে উঠেছে চিন্তার শক্তি, নৈতিকতার শক্তি এবং বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ওপর। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ-মানবিকতা, বিচারবোধ, সাম্য ও জ্ঞানের আলো অনুসরণ করেই একটি আলোকিত ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। শেষে তিনি ১৯৭১ সালে শহীদ সব বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব মো. শফিক উদ্দিন।
এসএসএইচ