‘যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের চেয়ে তার রাজনীতি অনেক শক্তিশালী’

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেন্দ্রবিদুতে রাখলে মূল পরিস্থিতি আড়ালে থেকে যাবে। দেশটিতে ব্যক্তি ট্রাম্পের চেয়ে ট্রাম্পইজম বা ট্রাম্পের রাজনীতি অনেক বেশি শক্তিশালী। তার রাজনীতির উপাদানগুলোর দিকে মনোযোগ না দিলে ঘুরে ফিরে ট্রাম্পের রাজনীতিই প্রধান হয়ে উঠবে।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে কানাডার টরেন্টোয় ফেসবুকে ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ অনুষ্ঠানে ‘ট্রাম্পের রাজনীতির শেষ নাকি শুরু’ শীর্ষক আলোচনায় উত্তর আমেরিকার রাজনীতি বিশ্লেষকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা কিংবা ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা আমেরিকার গণতন্ত্রকে কোনো সংকটে ফেলবে না। কিন্তু সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য আছে সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আহমেদ শফিকুল হক, টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহনাজ মোমেন এবং কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন সম্পাদক, গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সৈকত রুশদী।
টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মেহনাজ মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীরা খালি চোখে যা দেখা যায় তা নিয়েই কথা বলছেন। কিন্তু এর বাইরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা দেশটিতে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরির পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়েও তার রাজনীতি (ট্রাম্পোইজম) অনেক বেশি শক্তিশালী উল্লেখ করে বলেন, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিকটাকে আলোচনায় আনতে হবে।
ড. মেহনাজ মোমেন বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে আমেরিকায় ডান এবং বামপন্থী দুটি জনপ্রিয় গণজাগরণ তৈরি হয়েছে। বার্নি স্যান্ডার্সের নেতৃত্বে তৈরি হ্ওয়া বাম জাগরণে সমাজের এলিট সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জাগরণে এলিট শ্রেণীর সাথে সাধারণ নাগরিকরাও যোগ দিয়েছে। তার ফলশ্রুতিতেই আজকের আমেরিকা এবং ট্রাম্পের রাজনীতি।
কানাডার ম্যাকমাষ্টার ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আহমেদ শফিকুল হক তার আলোচনায় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের মধ্য দিয়ে আমেরিকার রাজনীতিতে ভদ্রতা এবং সৌজন্যতা তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে আরও যত্নশীল হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতিতে আরও যত্নবান হতে সহায়তা করবে।
তিনি প্রশ্ন করেন, আমেরিকা সারা দুনিয়ার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। কোথায় কী হচ্ছে সে তথ্য তারা সবার আগে জেনে যায়। অথচ নিজ দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি সহিংস ঘটনার খবর তারা আগেভাগে জানতে পারলো না কীভাবে?
ড. আহমেদ শফিকুল হক বলেন, যেকোনো সমাজেই অনেক রকম বৈষম্য থাকে। কিছু কিছু গোষ্ঠী বৈষম্যগুলো ব্যবহার করে জনগণকে উসকে দেয়। এই বৈষম্যগুলো এবং মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে অবশ্যই আমেরিকার নতুন সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সৈকত রুশদী বলেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলেই বিশ্বব্যাপী এখন ডানপন্থী রক্ষণশীলদের উত্থান পর্ব চলছে। ট্রাম্পের বিদায়ের মধ্য দিয়ে আমেরিকার রাজনীতি থেকে ডানপন্থীদের প্রভাব কমে যাবে-এমনটা ভাবার সুযোগ কম।
তিনি বলেন, লিবারেলরা অল্পতেই সন্তষ্ট হয়ে হাতগুটিয়ে বসে থাকে। কিন্তু রক্ষণশীলরা সহজে কিছুতে সন্তষ্ট হয় না। পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা সক্রিয় থাকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সৈকত রুশদী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টুইটার, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা একটি করপোরেশনের হাতে ছেড়ে দেওয়া ভালো কথা না। তিনি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনা-বিতর্কের প্রস্তাব করেন।
নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যকে কাজে লাগিয়ে অভিবাসীপ্রধান দেশগুলোয় রক্ষণশীল রাজনীতির বিকাশ ঘটানো হচ্ছে। উদারপন্থী রাজনৈতিক দল এবং সরকারগুলো এই বৈষ্যম দূরীকরণের উদ্যোগ না নিলে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে চরমপন্থা বিকাশের মাধ্যমে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব প্রকট হয়ে উঠবে।
এসআরএস