মালয়েশিয়ায় কড়া বিধিনিষেধেও অব্যাহত বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট বিতরণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মালয়েশিয়ায় চলছে লকডাউন। ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ লকডাউনের তৃতীয়দিন অতিবাহিত হচ্ছে আজ (১৫ জানুয়ারি)। এছাড়া যারা লকডাউন (এসওপি) অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া লকডাউনের মাঝেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ২১১ জন। মারা গেছেন আট জন। এর আগের দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৩৩৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৫১ হাজার ৬৬ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৫৮৬ জন।
এদিকে, মালয়েশিয়ার সরকার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম (এসওপি) ঘোষণার মাধ্যমে অধিক গণজমায়েতকে নিষিদ্ধ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতে দ্রুত পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। দেশটির সরকারের দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধ মেনে গত তিন দিনে প্রায় আড়াই হাজারেরও অধিক পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে।
গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ায় চলছে বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধের মধ্যেই পাসপোর্ট কার্যক্রম সময়োপযোগী করতে অ্যানালগ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে।
হাইকমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীদের পাসপোর্ট প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূতাবাসের কর্মীরা পাসপোর্ট বিতরণ করে যাচ্ছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন কর্মক্ষেত্রে সঠিক সময়ে ভিসা রিনিউ করতে পারেন সে লক্ষ্যে সব নীতিমালা অনুসরণ করে ছুটির দিনসহ দূতাবাস কর্মীরা অবিরাম দিনরাত কাজ করে করোনার মধ্যেও প্রায় এক লাখ ৩০ হাজারেরও অধিক পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও অন্যান্য সেবা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান লকডাউন ঘোষণার আগে শনি ও রোববার মালয়েশিয়ায় সরকারি ছুটি। এ দুদিন কমিশনের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিত করতে পাসপোর্ট সার্ভিস শাখার কর্মীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে, মালেয়শিয়ায় গত নভেম্বর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের রিক্যালিব্রেশন নামে বৈধকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বৈধ হতে নতুন পাসপোর্টের আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুন। বিদেশি দূতাবাসের মধ্যে একমাত্র মালয়েশিয়া ডাকযোগে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ চালু রেখেছে। পাসপোর্ট বিতরণে অনলাইন বুকিং সিস্টেমসহ পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানের বিষয়টি সহজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট অ্যান্ড ভিসা শাখার প্রধান মো. মশিউর রহমান তালুকদার জানান, মালয়েশিয়া সরকার একটানা লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি কন্ডিশনাল মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (সিএমসিও), স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম (এসওপি) জারি রেখেছে। এসব সরকারি বিধিমালা অনুসরণ করে পাসপোর্ট সার্ভিস স্বাভাবিক রাখা কঠিন চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র স্বাভাবিক ও নিবিড় করতে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সবধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং দ্রুত পাসপোর্ট বিতরণে দূতাবাস আন্তরিকভাবে কাজ করছে।’
ইতোমধ্যে সেবা দিতে গিয়ে হাইকমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাসপোর্ট শাখার প্রধান মশিউর রহমান তালুকদার।
মালয়েশিয়ায় নবনিযুক্ত হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, পাসপোর্ট দ্রুত ডেলিভারি দিতে ইতোমধ্যে হাইকমিশনে ছয় জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং আরও লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালয়েশিয়া পোস্ট অফিসের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে, যাতে করে দূরে কর্মরত কর্মীদের কাছে সহজে পাসপোর্ট পৌঁছে দেয়া যায়।
রিক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিয়োগদাতা বা মালিক নির্ভর। না জেনে না বুঝে কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছেন নতুন হাইকমিশনার। পাশাপাশি চলমান লকডাউনে সরকারের বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধ পালনেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান গোলাম সারওয়ার।
এফআর