দক্ষিণ আফ্রিকায় সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা বাড়ছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে কমিউনিটির বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক পোস্ট দিয়ে শুরু। অনলাইনে পরিচয় বাড়তে থাকে প্রবাসীদের মধ্যে। কয়েক হাজার ফলোয়ার হলে পেজটি হয়ে যায় পুঁজি। একে হাতিয়ার করে দূতাবাস, ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট ব্যক্তি, এনজিও, বিদেশি দাতাসংস্থাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতরে পদচারণা বাড়ে। লাইভে এসে ভালো ভালো কথার ফুলঝুরি ছড়ায়।
কমিউনিটিতে কিছুটা পরিচিত হয়ে উঠতেই এক সময় এসব ফেসবুক পেজ ব্যবহারকারী সাংবাদিক বনে যাচ্ছেন। কমিউনিটিতে নিজেকে বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বা পাবলিক ফিগার বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সাংবাদিক ছদ্মবেশী এসব প্রতারক রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলে নিজেদের ফেসবুকের টাইমলাইনে ঝুলিয়ে রাখেন। এখানেই শেষ নয়, সুযোগ বুঝে বিদেশে বেড়াতে আসা দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দামি মোবাইল ফোন, গয়না উপহার এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে প্রবাসে ওই সব গণমাধ্যমের প্রতিনিধি হচ্ছেন।
এভাবে নতুন নতুন পথ জোগাড় করে সাংবাদিক পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া কিছু এসএসসি পাস বা তারও কম পড়াশোনা জানা এক শ্রেণির প্রতারক ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে এমন সাংবাদিকের সংখ্যা আতঙ্কজনক হারে বেড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা সাংবাদিকতা বিষয়ে কোনা ধরনের শিক্ষা ছাড়াই ফেসবুকে পেজ খুলে সাংবাদিক বনে যাচ্ছে মানবপাচাকারী চক্রের সদস্য, হুন্ডিওয়ালা, হোটেলকর্মী থেকে শুরু করে প্রবাসী খুনের ইন্ধনদাতারা। এসব ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে দেশের গণমাধ্যম হাউসসহ সাধারণ প্রবাসীরা।
সচেতন প্রবাসীরা বলেন, বিদেশে কারা কোন উদ্দেশ্য এসেছে, তাদের অতীত জেনে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার উচিত পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেওয়া। অধিকাংশ প্রতারকরা সাংবাদিক সেজে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে মাঠে নেমেছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে সাংবাদিকতা নিয়ে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রবাসীদের অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকায় বিগ নিউজ ওয়ার্ল্ড নামের ফেসবুক পেজ থেকে অপকৌশল হিসেবে তাদের প্রচারিত মিথ্যাচার গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নামে-বেনামে শতাধিক ফেক ফেসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করা হচ্ছে। এসব পোস্টে সত্য ও যুক্তিযুক্ত মন্তব্য করলেও সেগুলো মুছে ফেলা হয়। এভাবে কল্পিত মিথ্যা বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে কমিউনিটিতে অস্থির করে তুলছে চক্রটি। ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দূতাবাসসহ বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সুনাম।
এ চক্রের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী মাওলানা গিয়াসউদ্দিন জানান, বিদেশের মাটিতে নিজ দেশ ও মানুষের সম্মানের কথা ভেবে এসব ঘটনায় তারা আইনি প্রক্রিয়ায় যান না।
অভিযোগ রয়েছে, বিগ নিউজ ওয়াল্ড নামের ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন মোহাম্মদ হিমেল দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথের প্রবাসী ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরকে সেখানকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে লাইভে যুক্ত করেন। পরবর্তীতে খরচ বাবদ জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে জোর করে সাত হাজার রেন্ড (প্রায় ৪০ হাজার টাকা) নেন। লাইভে এসে কথা বললে টাকা দিতে হয় না বিষয়টা জানতে পেরে জাহাঙ্গীর ওই ফেসবুক পেজের অ্যাডমিনের কাছে টাকা ফেরত চাইলে দেব দিচ্ছি বলে আর টাকা ফেরত দেয়নি।
হিমেলের বিরুদ্ধে আরও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। আফ্রিকার মোজাম্বিক ও বতসোয়ানায় মুহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ও আবেদুল ইসলাম নামের দুই বাংলাদেশির কাছে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার নামে তাদের কাছ থেকে যথাক্রমে ৫০ ও ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড ধরিয়ে দেয়।
বিষয়টা বুঝতে পেরে ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করে হিমেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এদিকে আইডি কার্ড জালিয়াতির বিষয়টি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে তারা হিমেলের বিরুদ্ধে আইর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার মাফিকিং এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ভয়ে তটস্থ থাকা আশ্রয়প্রত্যাশী রনি হোসেন নামের এক প্রবাসী বলেন, আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে হিমেল জানায় যে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। কিছু টাকা না দিলে খুনের দায়ে ফাঁসিয়ে দিয়ে তার পেজে রিপোর্ট লিখে দেওয়ার হুমকি দেয়।
সম্প্রতি হিমেল চোরাই পথে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হিমেল মানবপাচারকারী চক্রের হয়ে কাজ করে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে হিমেলের সঙ্গে মেইল ও মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে হিমেলের দৃষ্টিগোচর করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওএফ