মালয়েশিয়ায় অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার ‘সুযোগ’

করোনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিধিনিষেধের ফলে নতুন নিয়োগ থমকে গেছে। দেশগুলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশি মনোযোগ দিয়েছে। পাশাপাশি নিজ দেশে থাকা বিদেশিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। অবৈধ বিদেশী কর্মীদের বৈধ হতে রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচি চালু করেছে মালয়েশিয়া। ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে জুন পর্যন্ত ।
এ সুযোগ গ্রহণ করে বৈধভাবে অবস্থানের জন্য সোর্সকান্ট্রি অন্তর্ভুক্ত ১৫টি দেশের নাগরিকদের অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস। এটি মূলত মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মী ও নিয়োগকারীদের শৃঙ্খলিত করতে সরকারের প্রচেষ্টা।
১৫টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে বৈধকরণ কর্মসূচির প্রক্রিয়া তুলে ধরেছেন দেশটির ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক সেরি খায়রুল দাজাইমি দাউদ।
কর্মসূচির আওতায় বৈধ হতে নির্দিষ্ট শর্ত ও যোগ্যতা আরোপ করেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট বিভাগ। যেমন, যারা বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ভিসায় উল্লেখিত নিয়োগকারীর অধীনে কাজ করছেন কিন্তু ভিসা নবায়ন করেননি বা ওভার স্টে হয়েছে, নিজ নিজ কোম্পানিতে কাজ করেননি কিংবা কোম্পানি থেকে পালিয়ে গেছেন তারা এ সুযোগ পাবেন। তবে সেগুলো হতে হবে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। এরপরের হলে সেগুলো গ্রহণযোগ্য হবে না।
এর আগে দেশটির সরকার ২০১৬ সালে রিহায়ারিং নামে বৈধকরণ কর্মসূচি চালু করেছিল। তার সাথে রিকেলিব্রেশনের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এটি না বুঝলে প্রতারিত হতে হবে। যেমন, নৌ, সাগর বা স্থল পথে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করাদের রিহায়ারিংয়ে বৈধতা দিয়েছিল দেশটি। এবার সে সুযোগ থাকছে না।
রিহায়ারিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ভিসাধারীদেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার সুনির্দিষ্ট করে পিএলকেএস উল্লেখ করা হয়েছে এবং অবশ্যই বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের প্রমাণ থাকতে হবে।
রিহায়ারিং প্রক্রিয়ায় ভেন্ডর বা এজেন্ট ছিল। এবার কোনো ভেন্ডর বা এজেন্ট নিয়োগ করেনি সরকার। গত রিহায়ারিংয়ে বৈধ হতে আবেদন করে প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ ছিল সেসব ভেন্ডর বা এজেন্ট। ফলে এবার কোনো এজেন্ট নিয়োগ করেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এটি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে প্রচার করা হচ্ছে।
এবার কোম্পানি বা নিয়োগকারীরা সরাসরি ইমিগ্রেশনে কর্মীদের নামের তালিকা জমা দিয়ে বৈধতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। কোম্পানি নিয়োগ করতে পারবে কিনা তা যাচাই করবে লেবার ডিপার্টমেন্ট।
অর্থাৎ, বিদেশি কর্মী নিয়োগে কোটা না থাকলে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ নিয়ে সটকে পড়তে পারবে না কেউ। রিহায়ারিংয়ে অনেক ভুয়া ও ভূঁইফোড় কোম্পানি বা নিয়োগকারী বৈধতার নামে প্রতারণা করেছিল।
রিহায়ারিং কর্মসূচি শেষে হাজার হাজার কর্মীর প্রতারিত ও নিঃস্ব হবার অভিযোগ ছিল। অনেক প্রতারক হাজার হাজার কর্মীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে কৌশলে বাংলাদেশে এসে অবস্থান করে। ফলে তাদের খুঁজে পায়নি মালয়েশিয়া পুলিশ।
যদিও হাইকমিশন থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু দালাল ও প্রতারকদের চটকদার কথা এবং কর্মীরা নিজেদের তথ্য গোপন করায় সহজেই প্রতারিত হতে হয়েছিল। এবার এদের বৈধ করতে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী, এ ধরনের কাজে আর্থিক লেনদেন ফাইন্যান্সিয়াল অপরাধ। প্রতারিত ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন বলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে অনেকেই মামলা করেছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়া বা বাদীর অসহযোগিতায় সুরাহা হয়নি অনেক অভিযোগের। তবে দীর্ঘ অনুসন্ধান করে প্রতারকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় ভিসা করার প্রক্রিয়ায় কর্মীরা বেশি প্রতারিত হয়ে থাকেন। এজন্য তারা দালাল বা এজেন্টের কাছে অর্থ ও পাসপোর্ট দিয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা নকল ভিসা বা রিপ্লেসমেন্ট ভিসা ডান। অর্থাৎ কোনো বিদেশী কর্মী খালি থাকলে সেখানে আরেকজন বিদেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সংখ্যক নিয়োগের সুযোগ থাকেনা। তবে একজন ভিসা পেলে অনেকেই সে সুযোগ নিতে টাকা ও পাসপোর্ট দিয়ে থাকেন এজেন্ট, দালাল ও প্রতারকদের হাতে।
অভিবাসন বিষয়ক সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী বলেন, প্রতারণার কারণে মালয়েশিয়ায় কর্মীরা অবৈধ হন। যেমন, বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে কর্মী ভাগিয়ে আনা, পরিচিত জনের কাছে শুনে বেশি আয়ের লোভে সেখানে চলে যাওয়া, কাজ পছন্দ না হওয়ায় পালিয়ে যাওয়া। তাই দেশ ছাড়ার আগেই কর্মীদের এসব বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে অন্তত ভালোটা বুঝতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে অভিবাসন ব্যয় তুলে নিতে বেশি আয়ের উপায় খুঁজতে গিয়ে অবৈধ হতে বাধ্য হন। তাই সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় বাস্তবায়ন করতে হবে। বেতন, ভাতা ও কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রচার করতে হবে।
দূতাবাস ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বৈধতাপ্রত্যাশী বাংলাদেশিদের প্রতারিত না হতে সতর্ক করেছে।
এদিকে বিভিন্ন নিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বৈধকরণ কর্মসূচির আওতায় কর্মী নিতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে প্ল্যান্টেশন ও কৃষি খাতের অ্যাসোসিয়েশন কর্মী সংকটে থাকার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। প্রস্তুতকরণ খাতে অনেক কর্মী দরকার। ব্যয়বহুল নির্মাণ খাতে করোনার প্রভাবে খারাপ অবস্থা চলছে। এ চারটি খাতেই শুধু বৈধকরণ চলছে।
এসআরএস