দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন

ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ গবেষক ড. আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেছেন, দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। এখানে নতুন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে নতুন শিক্ষানীতির। আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে নতুন বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা পোস্টকে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আবুল বাশার বলেন, শিক্ষাকে বোঝার জন্য কারিকুলাম মূল বিষয়। কারিকুলাম বুঝতে হলে তিনটা স্তর জানা দরকার। প্রথমটা, ইনটেনশন। শিক্ষাব্যবস্থা আমরা কেমন দেখতে চাই। দ্বিতীয়টা, ইমপ্লিমেন্টেশন বা শ্রেণিকক্ষে এর প্রয়োগ। তৃতীয়টা, শিক্ষার্থীরা কী অর্জন করছে। আমাদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো ইন্টারন্যাশনাল মানের প্রাতিষ্ঠানিক রিসার্চের উদ্যোগ, প্রপার প্লানিং, পর্যাপ্ত বাজেটের অভাব; সর্বোপরি সংস্কৃতিগতভাবে অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের গ্লোবাল প্রতিযোগিতার বাজারে মৌলিক গবেষণা ও বাস্তবায়ন ছাড়া উচ্চতর শিক্ষার লক্ষ্য পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে পারে না।
‘এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বপ্রথম সরকারকে যুগোপযোগী ইন্টারন্যাশনাল মানের গ্রহণযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাব্যবস্থার মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
ড. আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, টপ ইন্টারন্যাশনাল ফরেন ইউনিভার্সিটিকে বাংলাদেশে কাজের অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে লোকাল এডুকেশন স্ট্যান্ডার্ডকে ইন্টারন্যাশনাল লেভেল উন্নীত করা এবং টপ ফাইভ পাবলিক ইউনিভার্সিটিকে রিসার্চ ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে রিসার্চ এক্সেল্যান্স রোল মডেল হিসাবে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
ড. আবুল বাশার ভূঁইয়া আন্তর্জাতিক সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স কর্তৃক প্রকাশিত ২০২১ সালের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান লাভ করেছেন। তিনি মালয়েশিয়ার সেলাংগরের প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয় University of Selangor (UNISEL) এর ব্যবসায় শিক্ষা ও হিসাববিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক। সংস্থাটি সারাবিশ্বের ২০৬টি দেশের ১৩ হাজার ৫৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত লাখেরও বেশি বিজ্ঞানীর সাইটেশন ও অন্যান্য ইনডেক্সের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী এ তালিকা প্রকাশ করে।
ড. আবুল বাশার ভূঁইয়া বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ক্যাটাগরিতেই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এবং মালয়েশিয়াতে ৫২তম স্থান অধিকার করেন। এশিয়া ক্যাটাগরিতে তার অবস্থান ৩৭৭তম।
গত দুই দশকে ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক গবেষণায় বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত গবেষণা-প্রবন্ধের পর্যালোচনা জরিপে সেরা গবেষক হিসেবে উঠে এসেছে ড. আবুল বাশার ভূঁইয়ার নাম। ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ গবেষণায় একক গবেষক হিসেবে সর্বাধিক প্রবন্ধ প্রকাশ এবং অন্যান্য গবেষকদের গবেষণায় তার ব্যবহৃত গবেষণা মডেল রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
ড. আবুল বাশার ভূঁইয়া গত এক দশক ধরে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও পাঠদান করে আসছেন। একই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব শরিয়াহ অ্যান্ড কর্পোরেট গভর্ন্যান্স রিসার্চের প্রধান সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছেন।
এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রায় ১০০টির অধিক প্রবন্ধ প্রকাশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশি এ গবেষক। ২০১২ সালে ‘ক্ষুদ্রঋণ ও টেকসই জীবিকা নির্বাহ’ বিষয়ের ওপর The National University of Malaysia (UKM) থেকে পিএইচডি করেন।
ড. আবুল বাশার ভূঁইয়া হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পিটুয়ারকান্দি গ্রামের মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ ভূঁইয়ার চতুর্থ সন্তান। ১৯৯৭ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় স্ত্রী-সন্তানসহ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক।
এমএআর/