ভালো কাজের সওয়াব পেতে কি নিয়ত করা জরুরি?
নেক আমলের সওয়াব পেতে আলাদা করে এমন কোনো নিয়ত করা কি জরুরি যে, আমি যেই কাজ করছি এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা যেন আখেরাতে আমাকে সওয়াব দান করেন? নাকি নিয়ত ছাড়াই মানুষ আখেরাতে নেক আমলের সওয়াব পাবে? বিষয়টি নিয়ে অনেকের মাঝে এমন প্রশ্ন উদয় হতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে ইসলামী চিন্তাবিদদের সমাধান হলো; মানুষের আসল ঠিকানা আখেরাত। আখেরাতে নেক আমল বা ভালো কাজ হবে মানুষের অমূল্য সম্পদ। কারণ জান্নাতকে সাজানানো মাধ্যম হলো নেক আমল। যার নেক আমল যত বেশি জান্নাতে তার মর্যাদা ও অবস্থান ততটাই ওপরে থাকবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি এবং নেক কাজ করেছে- তবে তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। -(সুরা বাকারা, আয়াত, ৬২)
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনে জান্নাত লাভের আশায় মানুষ প্রতিনিয়ত নেক আমল, বিভিন্ন তাসবিহ, জিকির আজকার করে থাকেন। ফেরেশেতারা তাৎক্ষণিক এসবের সওয়াব আমলনামায় লিপিবদ্ধ করেন। মৃত্যুর পর কবরেও এর সওয়াব পাওয়া যাবে। এর জন্য আলাদাভাবে নিয়ত করার দরকার নেই।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে’ (-সূরা কাফ: ১৮)। অর্থাৎ, আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য প্রহরী হিসেবে ফেরেশতা নিযুক্ত আছে; যারা মানুষের প্রতিটি কথা ও কাজ জানে।
হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তানের আমল লিপিবদ্ধ করার জন্য দু’জন ফেরেশতা নির্ধারিত থাকেন, যারা মানুষের ডানে ও বামে অবস্থান করেন। ডান দিকের ফেরেশতা সৎ আমল ও বাম দিকের ফেরেশতা গোনাহ লিপিবদ্ধ করে থাকেন। ফেরেশতাদ্বয় সর্বাবস্থায় মানুষের পাশে থাকেন, কেবল প্রস্রাব-পায়খানা, স্ত্রী সহবাস ও গোসলের সময় তারা দূরে সরে থাকেন।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ,৪৪৭)
এতএব মানুষ যেসব আমল করে সবকিছুর সওয়াব ফেরেশতাদের কাছে লিপিবদ্ধ থাকে। এর সওয়াব পেতে আলাদাভাবে নিয়ত করতে হয় না। কবর, হাশর ও আখেরাতে যথাসময়ে এর ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে নেক আমল করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বান্দার হক আদায়ের বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং গিবত, পরনিন্দা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কারণ, গিবতের কারণে মানুষের নেক আমল নষ্ট হয়ে যায় এবং কারো গিবত করা হলে নিজের আমল নামার সওয়াব সেই ব্যক্তির আমলনামায় চলে যায়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, 'গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার থেকেও গুরুতর অপরাধ। সাহাবিগণ জানতে চাইলেন— কীভাবে এটা গুরুতর অপরাধ হতে পারে ? নবীজি (সা.) বললেন, ব্যভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর নিকট তাওবা করলে— তিনি মাফ করবেন। কিন্তু নিন্দুক সে পর্যন্ত আল্লাহর ক্ষমা পাবে না— যতকাল যার নিন্দা করেছে, তার থেকে ক্ষমা না নেবে।' (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৩৫)
এনটি