তাসবিহে ফাতেমি কী? পড়লে যে সওয়াব হয়

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে এবং ঘুমানোর আগে (৩৩) বার সুবহানাল্লাহ, (৩৩) বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং (৩৪) বার আল্লাহু আকবার পড়ার কথা হাদিসে রয়েছে। একে তাসবিহে ফাতেমি বলা হয়। এর বিশেষ সওয়াব রয়েছে। এই তাসবিহগুলোর প্রত্যেকটিতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসামূলক বাক্য রয়েছে। এই তাসবিহ প্রচলনের পেছনে বিশেষ একটি ঘটনা রয়েছে।
হাদিস থেকে জানা যায়- নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের সদস্য ও মেয়েদের মধ্যে সব থেকে আদরের ছিলেন হজরত ফাতেমা রা.। তিনি সংসারের সব কাজ নিজ হাতেই করতেন। হজরত আলী রা. বলেন, একবার গমের চাক্কি পেষণ করতে করতে ফাতেমা রা.-এর হাতে ফসকা পড়ে যায়, এতে তার কাজ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল।
এমন সময় একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে দরবারে অনেক গনীমত জমা হল। এতে দাস-দাসীও ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের মাঝে সেগুলো বণ্টন করে দিচ্ছিলেন।
আলী রা. বলেন, আমি হজরত ফাতেমা (রা.)-কে বললাম, যদি তুমি তোমার বাবার কাছে গিয়ে একজন খাদেম চেয়ে নাও, তাহলে ভালো হয়। এতে তোমার কাজকর্ম করতে সুবিধা হবে।
হজরত ফাতেমা রা. রাসুল (সা.)-এর কাছে গেলেন, কিন্তু সেখানে অনেকের ভিড় থাকায় ফিরে এলেন। পরদিন রাসুল (সা.) নিজেই মেয়ের বাড়িতে এসে বললেন, ‘গতকাল তুমি কী কাজে গিয়েছিলে?’ তিনি চুপ হয়ে গেলেন (লজ্জায় কথা বলতে পারলেন না)।
আলী রা. বলেন, আমি নিজেই বললাম, হে আল্লাহর রাসুল সা.! চাক্কি পেষণ করতে করতে তার হাতে দাগ পড়ে গেছে। সংসারের কাজ করতে তার অনেক কষ্ট হয়। তাই আমি তাকে বলেছি, একজন খাদেম নিতে পারলে কাজে সুবিধা হত।

একথা শুনে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফাতেমা! আল্লাহকে ভয় করো, এবং তাঁর হুকুম-আহকাম পালন করো, আর ঘরের কাজকর্ম করতে থাকো।
আল্লাহর রাসুল (সা.) তার মেয়ে ফাতেমা রা. ও জামাতা হযরত আলী রা.-কে আরও বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেবো না— যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা (৩৩) বার সুবহানাল্লাহ, (৩৩) বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং (৩৪) বার আল্লাহু আকবার বলবে; তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে।’ -(বুখারি, হাদিস : ৩৭০৫)’
এ কথা শুনে ফাতেমা (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্য এবং তাঁর রাসুলের প্রস্তাবে সন্তুষ্ট’। (বুখারি (ইফা), হাদিস : ৩৪৪০)
আরেক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফুফাতো বোনের ঘটনাও এভাবেই এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই বোন ও রাসুল (সা.)-এর কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) মিলে রাসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। আমরা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরে একজন খাদেম চাইলাম।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘খাদেম দেওয়ার ক্ষেত্রে তো বদরের পুত্রহারা সন্তান তোমার চেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। আমি তোমাদের খাদেমের চেয়েও অধিক উত্তম জিনিস বলব। প্রত্যেক নামাজের পর এই তিনটি শব্দ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার আর একবার এই দোয়া পড়বে—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির। -(মুসলিম, হাদিস : ১২৩৯)
এনটি