রমজান যেভাবে ইবাদত পালনে অভ্যস্ত করে তোলে

মুমিনদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের মাস রমজান। মুসলিম জাতির জন্য রহমতস্বরূপ এ মাসটি নৈতিক উন্নয়ন, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সামাজিক সাম্যের নিশ্চয়তা বিধানের এক অনন্য সুযোগ।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- 'কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। অশ্লীল কথাবার্তা ও অশালীন আলোচনা থেকে দূরে থাকাই আসল রোজা। অতএব হে রোজাদার! যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সাথে অভদ্রতা করে তাহলে তাকে বলো, আমি রোজাদার।' (ইবনে খুজাইমা ও ইবনে হিকাম)।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন- 'আমার উম্মত যদি মাহে রমজানের গুরুত্ব বুঝতো, তাহলে তারা সারা বছর রমজান কামনা করতো।' (মাযমাউজ জাওয়ায়েদ)।
রমজানের পুরো মাস দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা একজন রোজাদারকে ইসলামি অনুশাসন অনুসরণে অভ্যস্ত করে তোলে। মাহে রমজানে রোজাদারকে শেষ রাতে সাহরি খেতে উঠতে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পানাহার বন্ধ করে দিতে হয়। এমন অনেক কাজ আছে সারাদিন যেগুলো থেকে বিরত থাকতে হয়।
নির্দিষ্ট সময়ে ইফতার করতে হয়। সামান্য আগে-পরে করা যায় না। কিছু সময়ের জন্য আরাম-আয়েশেরও ব্যবস্থা আছে। তারপরই তারাবির নামাজের জন্য মসজিদের দিকে ছুটতে হয়। এভাবে পূর্ণ এক মাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজাদারকে সৈনিকের মতো মজবুত নিয়মে আবদ্ধ থাকতে হয়। এরপর বাকি ১১ মাসের জন্য বাস্তব ক্ষেত্রে মুক্ত করে দেয়া হয়। এ মাসে রোজাদার যে প্রশিক্ষণ লাভ করে পরবর্তী ১১ মাসে বাস্তব কাজ-কর্মে যেন তা বাস্তবায়িত হয়, এটাই মাহে রমজানের মূল শিক্ষা।
তবে মনে রাখতে হবে, প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হলেই কেউ ভালো সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠে না। ভালো সৈনিক হতে হলে সৈনিক জীবনের মূল দর্শন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে তাকে পূর্ণ আস্থাশীল হতে হবে। তেমনি রমজানে মাসব্যাপি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেও অনেকেরই আত্মিক পরিশুদ্ধি আসে না। কারণ আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য প্রয়োজন ইসলামের মূল দর্শন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক