মহানবী সা. যেভাবে অজু করতে শিখিয়েছেন

হজরত আমর ইবন আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ইসলাম আগমনের আগে জাহেলি যুগে থেকেই আমার মনে ধারণ জন্মেছিলো যে মানুষজন ভ্রষ্ট পথে চলছে...
এরপর আমি এক ব্যক্তির সম্পর্কে শুনলাম যে, তিনি মক্কায় অদ্ভুদ ধরনের কিছু কথা বলছেন। একথা শোনার পর আমি আমার বাহন নিয়ে তার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, মক্কার লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রেগে আছে। আমি গোপনে তার সঙ্গে সাক্ষাত করলাম।
তার কাছে গিয়ে আমি জিগেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি নবী। আমি বললাম, নবী কী? তিনি বললেন, আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।
আমি বললাম, কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, ‘জ্ঞাতিবন্ধন (আত্মীয়তার সম্পর্ক) অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আমি বললাম, এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে? তিনি বললেন, স্বাধীন মানুষ ও কৃতদাস। তখন তার সঙ্গে আবু বকর ও বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ছিলেন।
আমি বললাম, আমিও আপনার অনুগত। তিনি বললেন, তুমি এ কাজ তোমার বর্তমান সময়ে করতে পারবে না। তুমি তো এখন আমার অবস্থা ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাচ্ছো। তুমি এখন বাড়ি ফিরে যাও। এরপর যখন তুমি আমার বিজয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো।
আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে গেলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করতাম। আমার বংশের কিছু লোকও মদিনায় এলো। আমি তাদের কাছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তারা আমাকে বললো, তার সম্প্রদায় তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল; কিন্তু তারা সফল হয়নি।
একথা শুনে আমি মদিনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম। তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তো ওই ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সঙ্গে সাক্ষাত করেছিরে।
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা -তা আমাকে বলুন? আমাকে নামাজ সম্পর্কে বলুন?
তিনি বললেন, ‘তুমি ফজরের নামাজ পড়। তারপর সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কারণ, তা শয়তানের দু’শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় এবং সে সময় কাফিররা তাকে সিজদাহ করে। এরপর আবার তুমি নামজ পড়। কারণ, নামাজে যে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া বল্লমের সমান হয়ে যায়। এরপর নামাজ থেকে বিরত হও। কারণ, তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়। এরপর যখন ছায়া বাড়তে শুরু করে, তখন নামাজ পড়। কারণ, এ নামাজে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন।
এরপর তুমি আসরের নামাজ পড়। এরপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকো।কারণ, সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত যায় এবং তখন কাফিররা তাকে সাজদাহ করে।
এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে অজু সম্পর্কে বলুন?
তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি কাছে গিয়ে (হাত ধোওয়ার পর) কুল্লি করে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহগুলো ঝরে যায়।
এরপর সে যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধোয়, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। এরপর সে যখন তার দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। এরপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে ঝরে যায়। এরপর সে যখন তার দুই পা ধোয়, তখন তার পায়ের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়।
এরপর সে যদি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে, আল্লাহর প্রশংসা ও তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে -যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ তায়ালার জন্য খালি করে, তাহলে সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।
(মুসলিম)