মসজিদে লালবাতি জ্বালিয়ে সুন্নত থেকে বারণ করা যাবে?

লালবাতি নিষেধাজ্ঞাবোধক সংকেত। তাই মসজিদে ফরজ নামাজের আগে লালবাতি জ্বালানোর একটি অর্থ হলো- এই মুহূর্তে নামাজ পড়া নিষেধ। লালবাতির আরেকটি ব্যাখ্যা আছে। সেটি হলো- সতর্ক বা সাবধান করা। অর্থাৎ লালবাতি জ্বালিয়ে এটি বোঝানো যে- ফরজ আসন্ন, তাই নফলে ব্যস্ত হওয়া অনুচিত।
এখানে দ্বিতীয় অর্থটি নিলে ভুল বোঝাবুঝি অনেকটা কমে যায়। মূলত এই উদ্দেশ্যেই মসজিদে লালবাতি জ্বালানো হয়। যাতে মুসল্লি ফরজের কয়েক রাকাত হারিয়ে না বসেন বা মাসবুক না হন। যদিও অনেক আলেম লালবাতি জ্বালানোকেই মসজিদের শিষ্টাচার পরিপন্থী মনে করেন। কেননা মসজিদ ইবাদতের স্থান; তাই নিষেধাজ্ঞা বা সাবধানতা যে অর্থই নেওয়া হোক না কেন, তা মসজিদের মুসল্লিদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ছাড়া কিছু নয়।
তবে ‘লালবাতি জ্বললে নামাজ পড়া নিষেধ’ এরকম কোনো লেখা যদি মসজিদে টাঙিয়ে দেওয়া হয়, এর অর্থ দাঁড়াবে এই মুহূর্তে সুন্নত পড়া নাজায়েজ বা হারাম। যা সরাসরি সুন্নতের পরিপন্থী। দুঃখজনক হলেও সত্য- অনেক মসজিদের চিত্র এমনই। যা মুসল্লিদের সতর্ক করার শুদ্ধ পদ্ধতি নয়। বরং এই বাক্যের পরিবর্তে ‘জামাতের সময় নিকটে’ জাতীয় কোনো কথা লিখে দেওয়াই উত্তম হবে।
কেননা সাধারণত জোহর, আসর ও এশার ফরজ শুরুর ২/৩ মিনিট আগে লালবাতি জ্বালানো হয়। অর্থাৎ চার রাকাত সুন্নতবিশিষ্ট নামাজগুলোতেই লালবাতি জ্বালানো হয় এবং বোঝানো হয় যে, ৪ রাকাত সুন্নত পড়তে গেলে মাসবুক হবেন। এখানে যে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো- মুসল্লি ওই ২/৩ মিনিটে ৪ রাকাত সুন্নত পড়বেন কথা নেই। তিনি তো দু’রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ও পড়তে পারেন। যা ২/৩ মিনিটে অনায়াসে পড়া যায়। তাই ‘লালবাতি জ্বললে নামাজ পড়া নিষেধ’ এরকম কোনো লেখা সঙ্গত নয়।
তবে হ্যাঁ জুমার খুতবার সময় লালবাতি জ্বালানো হলে বিশুদ্ধ বর্ণনামতে সমস্যা নেই। কেননা আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন-আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি যে, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে আর ইমাম খুতবা দিচ্ছে মিম্বরের উপর, তাহলে ইমাম ফারিগ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই, কোনো কথাও নেই। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ২/১৮৪, হাদিস: ২০১৪) ইবনে হিব্বান (রহ.) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
ইমাম খুতবাদানকালে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ—এটি ইবনে ওমর (রা.)-এরও মত। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২/১২৪)। ওমর (রা.), উসমান (রা.), আলী (রা.)-সহ অধিকাংশ সাহাবি, তাবেয়ি ও পূর্ববর্তীদের মতামত এটাই যে, ইমামের খুতবাদানকালে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। (শরহে মুসলিম লিন নববি রহ: ১/২৮৭)