নেত্রকোণায় ইসলামি বইমেলার শেষ দিন আজ

নেত্রকোণায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত ইসলামি বইমেলার শেষ দিন আজ। নেত্রকোণা শহরের কালেক্টরেট মাঠে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে আজ শুক্রবর (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ মেলা শেষ হচ্ছে। মেলাটির আয়োজন করে ইসলামি বইমেলা বাস্তবায়ন কমিটি নেত্রকোণা। মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনী ও লাইব্রেরি মিলিয়ে মোট ২০টি স্টল অংশগ্রহণ করে।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রথমবারের মতো আয়োজিত ইসলামি বইমেলায় পাঠকের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগে একুশে বইমেলা কেন্দ্র করে নেত্রকোণায় মেলার আয়োজন হলেও এবারই প্রথম ইসলামি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকাশক, স্টল মালিক ও আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মেলা আয়োজন করায় তারা খুবই আনন্দিত। তারা জানান পাঠকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
খুবাইব কাসেমী নামের এক আয়োজক বলেন, আমাদের ইসলামি বইমেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, যেহেতু আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম তাই আমাদের ইসলামি সংস্কৃতি বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে উপস্থাপন করা। তারা যেন ইসলামের সংস্কৃতিটা বুঝে এবং এ বিষয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়। এই উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের এই বইমেলার আয়োজন। উন্নত মুসলিম দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয়ভাবে জমকালো ইসলামি বইমেলার আয়োজন করে। সেখানে বিভিন্ন বইয়ের প্রকাশনী, লেখক, পাঠকের সমাগম ঘটে। বিগত কয়েক বছর ধরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোণাতেও আমরা চেষ্টা করলাম ইসলামি ভাষা চর্চা কতটুকু, ভাষার গুরুত্ব কী, বাংলা ভাষায় ইসলামের প্রয়োজনীয়তা এগুলো ফুটিয়ে তোলার জন্যই ইসলামি বইমেলার আয়োজন।
সদরুল আমিন সাকিব নামে আরেক আয়োজক বলেন, পাঠক ও বইয়ের সঙ্গে যে একটা যোগাযোগ এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এখানে কম-বেশি লাভ-লস এগুলো আমরা মাথায় নিইনি। আমাদের একটি ভয় ছিল যে, আমরা কতটুকু সফল হতে পারব। কারণ প্রথম হিসেবে যেকোনো জিনিসের একটা বাধা থাকে। তবুও আমরা আল্লাহর নামে সাহস করে শুরু করেছি। শুরু হিসেবে আমাদের যতটুকু আশা ছিল, আমরা তার থেকে আরও বেশি অর্জন করেছি, আমাদের ভালো পাঠক সমাগম হচ্ছে। আমাদের যা আশা ছিল তার থেকে আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। যদিও বর্তমান জেনারেশনের মোবাইল ও বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিজের কারণে একটা বিক্ষিপ্ততা আছে। কিন্তু তারপরও আমাদের ভালো পাঠক সমাগম হচ্ছে। প্রতিটি স্টলেই বেশিরভাগ সময়েই পাঠকের ভিড় লেগে থাকছে। তারা শুধু যে মেলায় ঘুরে দেখে চলে যাচ্ছেন বিষয়টা এমন না, ভালো বিক্রিও হচ্ছে।
অলিউর রহমান নামে এক পাঠক বলেন, শুধু নেত্রকোণা নয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বই কেন্দ্রিক যে আয়োজনগুলো, বইমেলা অথবা পাঠচক্র সেগুলোর সঙ্গে আমি যুক্ত থাকার চেষ্টা করি। নেত্রকোণাতেও আজকের এই ইসলামি বইমেলায় উপস্থিত হয়েছি। এবার বইমেলাতে লোকসমাগম ভালোই দেখছি। যদিও এবারের বইমেলায় পাঠক শ্রেণিটা মাদ্রাসাকেন্দ্রিক। তবে এরকম লোকদের উপস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। তারাও আমাদের সমাজের একটি অংশ। তাদের বাদ দিয়ে কোনো আয়োজন করলে সেটা হয় না। কেউ যদি নিজেদের আয়োজন করতে চায়, আয়োজনটা যদি স্বতঃস্ফূর্ত হয় এবং এই আয়োজনটা যদি শহরের অন্যান্য মানুষকে ছুঁয়ে যায়, এটাই তাদের সার্থকতা। সে জায়গা থেকে আমি একজন পাঠক হিসেবে বলব যে, তারা একদিক থেকে সার্থক যে তারা নেত্রকোণার একটা শ্রেণিকে ছুঁতে পেরেছে। অন্যান্য বছর বইমেলায় যেখানে শুধু আয়োজকদের দেখা যেত, পাঠকশূন্যতা থাকতো। সে জায়গা থেকে এবারের বইমেলায় পাঠকশূন্যতা নেই।
নেত্রকোণায় এবারের ইসলামি বইমেলায় আয়োজনে ছিলেন মো. আসাদুর রহমান আকন্দ, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ ও মাওলানা মাজহারুল ইসলাম।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/এনটি/এমজেইউ