ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে ওষুধ খাওয়া যাবে কি?

প্রতি মাসে নারীদের ঋতুস্রাব বা মাসিক হয়। এটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য এমনটা ব্যবস্থা করেছেন। তবে এটা বন্ধ করে রাখা— একটি অস্বাভাবিক কাজ। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
মাসিকের মধ্যে আল্লাহ তাআলা কিছু হিকমত বা প্রজ্ঞা নিহিত রয়েছে। এ দিনগুলোতে আল্লাহ তাআলা নারীদের মাজুর (অপারগ) রেখেছেন। নামাজ, রোজা আদায় না করার কারণে জবাবদিহি নেই। এমনকি নামাজ পুরোপুরি মাফ। রোজার কাজা অন্য সময় করে নিতে হয়।
আবার এই কারণে নারীর প্রতিদান কোনো অংশে কম হয় না। আগে নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি করার মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করা হতো। এখন এগুলো না করেও আল্লাহর আনুগত্য করা হবে। তাই মাসিক বন্ধ করে এ ধরনের কষ্ট না করাই উত্তম। মাসিক বন্ধ রাখলে— আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতির অপচেষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায়।
ঋতুস্রাব বন্ধে ওষুধ ব্যবহার
অবশ্য মাসিকের রক্ত বন্ধ রাখার জন্য ওষুধ ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়। মাসিক বন্ধ করে রাখা কিংবা বিলম্বিত করে রাখার ওষুধ ও চিকিৎসা রাসুল (সা.)-এর সময়েও ছিল। কিন্তু নবী (সা.) কখনও এ ধরনের ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেননি। তবে বাস্তবতা হলো, রাসুল (সা.) কখনো নিষেধও করেননি।
তবে কোনো কোনো সময় ওষুধ ব্যবহার নারীর জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাসিক আসার দিনগুলোতে অনিয়ম দেখা দেয়। যার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আবার অনেক সময় ওষুধ খেলেও মাসিকের মতো প্রবহমান কিছুর জন্য প্রতিবন্ধক হয় না। ফলে নারীর পেরেশান হতে হয়। সে জানে না এটা কি মাসিকের রক্ত নাকি কোনো অসুবিধা হওয়ার কারণে অন্য কোনো রক্ত আসছে। তখন তার নামাজ, রোজা নিয়েও বেশ বিপাকে পড়তে হয়। নারীকে তখন অনেকটা উদ্বিগ্ন দেখায়। পরে দেখা যায়— তাকে বাধ্য হয়ে ওষুধের ব্যবহার ছাড়তে হয়। ডাক্তাররাও ওষুধ ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। কারণ, এর থেকে অনেক রোগের উপসর্গ তৈরি হয়।
ওষুধ ব্যবহার করে ঋতুস্রাব বন্ধের হুকুম
তবে যেসব ওষুধে ক্ষতির আশঙ্কা নেই, সেগুলো ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে হজ ও ওমরার সফরে ব্যবহার করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সফর থেকে ফেরা পর্যন্ত মাসিক থেকে মুক্ত থাকতে পারবে— এমন ওষুধ নারী ব্যবহার করতে পারবে? তিনি বললেন, আমি এতে কোনো অসুবিধা মনে করি না। অতঃপর তিনি বললেন, এক্ষেত্রে পিলুর পানি খুবই উপকারী।’
মাসিক শুরু হওয়ার আগেই যদি ওষুধ খেয়ে নেওয়া হয়, আর রক্ত না আসে; তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত না আসবে— ততক্ষণ পর্যন্ত নারী পবিত্র বলে গণ্য হবে। এ দিনগুলোতে নামাজ, রোজা আদায় করতে হবে। কোরআন তিলাওয়াত, তাওয়াফ, সহবাস ইত্যাদিও করা যাবে।
আর মাসিকের রক্ত শুরু হয়ে গেলে একং ওষুধ খেয়ে বন্ধ করলে— ঋতুবতী নারী পবিত্র বলে গণ্য হবে না; বরং মাসিকের সর্বনিম্ন সীমা তিন দিন পর্যন্ত— নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, তাওয়াফ ও সহবাস ইত্যাদি সব নিষেধ। এরপর থেকে সব করা যাবে।
সূত্র : মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ১/৩১৮; খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২১৩; হিন্দিয়া : ১/৩৮; আল-মুগনি : ১/৪৫০)।
লেখক : শিক্ষক হাদিস ও ফতোয়া বিভাগ, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।