যুক্তরাজ্যের যেসব বিমানবন্দরে আছে নামাজের সুবিধা

ইসলাম যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হওয়ায় দেশটিতে নামাজের জায়গার চাহিদা বাড়ছে । ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ। প্রতিদিন পাঁচবার সময়মতো নামাজ আদায় করেন মুসলিমরা। ভ্রমণ কিংবা জনসমাগমপূর্ণ স্থানে সময়মতো নামাজ আদায় অনেক সময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাজ্যের মুসলমানদের জন্য।
২০২৪ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের ৭২% মুসলমান বাসার বাইরে থাকা অবস্থায় নামাজের সময় মিস হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকেন। ২৫ বছরের কম বয়সী ৪৮% মুসলমানের ক্ষেত্রে এ সমস্যা প্রকট ।
বিমানবন্দরে নামাজের ব্যবস্থা
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে মুসলমান যাত্রীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমন কয়েকটি বিমানবন্দর হলো—

লন্ডন হিথরো বিমানবন্দর
লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরের পাঁচটি টার্মিনালেই মাল্টি-ফেইথ প্রেয়ার রুম রয়েছে। এগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। টার্মিনাল ৫–এর গেট এ২১-এর কাছে কিবলার দিক চিহ্নিত করা আছে এবং জায়নামাজসহ নামাজের ঘর রয়েছে।

লন্ডন গ্যাটউইক
লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে মাল্টি-ফেইথ প্রেয়ার রুম ও অজুর ব্যবস্থা রয়েছে। দক্ষিণ টার্মিনালের নামাজ রুমটি পরিচ্ছন্নতা ও নামাজের উপযুক্ত পরিবেশের জন্য প্রশংসিত।
ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট

ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ১- ও টার্মিনাল ২– এ নামাজের স্থান রয়েছে। টার্মিনাল ১-এ নিরাপত্তা তল্লাশির পর নামাজের সুযোগ রয়েছে।
টার্মিনাল ২–এ ২০২৪ সালে নামাজের জন্য স্থান চালু করা হয়। এখানে নারীদের জন্য পৃথক অজুর ব্যবস্থা রয়েছে।
বার্মিংহাম এয়ারপোর্ট

যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিমানবন্দরে যাত্রীদের বসার জায়গার কাছে মাল্টি-ফেইথ রুমে অজুর ব্যবস্থা ও নামাজের জায়গা আছে।
লন্ডন স্ট্যানস্টেড

এই বিমানবন্দরের মূল টার্মিনালে নামাজের জন্য ছোট একটি রুম রয়েছে। তবে ব্যস্ত এখানে জায়গা পাওয়া দুষ্কর।
এর বাইরে লুটন, ব্রিস্টল এবং এ জাতীয় ছোট বিমানবন্দরগুলোতে আশপাশে নিরিবিলি কোনো জায়গায় সুযোগমতো নামাজ পড়ার সুবিধা পান মুসলিম যাত্রীরা।
আরও পড়ুন
বিমানবন্দর ছাড়াও যেসব পাবলিক স্থানে নামাজের সুবিধা রয়েছে :
ট্রেন স্টেশন

লন্ডন কিংস ক্রস ও বার্মিংহাম নিউ স্ট্রিটে মাল্টি-ফেইথ রুম আছে। কিংস ক্রস–এ প্ল্যাটফর্ম ৯-এর পাশে অজুর ব্যবস্থা ও নামাজের জন্য একটি নির্ধারিত কক্ষ আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩০% মুসলিম শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নামাজের ব্যবস্থা এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। যেমন, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারের ইসলামিক সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় একটি মসজিদ ও নামাজঘর রয়েছে।
শপিং সেন্টার
ওয়েস্টফিল্ড লন্ডন ও ট্র্যাফোর্ড সেন্টার (ম্যানচেস্টার)-এ মাল্টি-ফেইথ রুম ও অজুর ব্যবস্থা রয়েছে। ওয়েস্টফিল্ডের রুমটি ফুড কোর্টের পাশে এবং সহজলভ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বলে পরিচিত।
হাসপাতাল ও অফিস
লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের মতো এনএইচএস হাসপাতালগুলোতে কিবলা স্থান চিহ্নিত করে নামাজঘর রয়েছে। লন্ডনের অনেক কর্পোরেট অফিসে এখন মাল্টি-ফেইথ রুম যুক্ত হচ্ছে।
তবে মানের তারতম্য রয়েছে—কিছু জায়গায় সুবিধাগুলো আধুনিক ও প্রশস্ত, আবার কিছু ছোট স্থানে তা ন্যূনতম পর্যায়ে। ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৬৫% মুসলমান নামাজঘরগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও দিকনির্দেশনার উন্নতি চান।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
ছোট বিমানবন্দর ও গ্রামের মতো জায়গায় নামাজের নির্ধারিত জায়গা না থাকায় অনেকে পার্কিং লটে বা কোনো একটি কোণে নিরিবিলি জায়গায় নামাজ আদায় করতে বাধ্য হন।
প্রায় ৬০% নামাজঘরে নারীদের জন্য পৃথক অজুর স্থান নেই।
মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেন (এমসিবি)-এর মতো সংগঠনগুলো নিয়মিত ভেন্যুগুলোর সঙ্গে কাজ করে এসবের রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়নের জন্য।
সূত্র : হালাল টাইমস