দুই পা নেই তাতে কী, সাবির ফাতিহর আছে তাসবিহ আর খোদাপ্রেম

জন্ম থেকেই দুই পা নেই, হাতেও রয়েছে অক্ষমতা। তবু জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন ধৈর্য আর সংগ্রাম দিয়ে। হুইলচেয়ারে বসে তৈরি করছেন আল্লাহর নামে জিকির করার উপকরণ তাসবিহ। মহান এ কাজে মিশে থাকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা।
বলছিলাম আরবের দেশ জর্ডানের নাগরিক সাবির ফাতিহ-এর কথা। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইনে বসবাসরত সাবির ফাতিহ প্রতিদিন তিনটি করে তাসবিহ বানান ধর্মপ্রিয় মানুষের জন্য। সেগুলো বিক্রি করে চালান নিজের জীবন।
৫০ বছর বয়সী সাবির ফাতিহ জন্ম থেকেই একজন প্রতিবন্ধী। কিন্তু তার মনোবল অসীম। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমার পা নিয়েছেন, কিন্তু দিয়েছেন মনোবল। আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞ।’
আল দাইদ খেজুর উৎসবে বসে দুই আঙুলে তাসবিহের পাথর সাজাচ্ছিলেন ফাতিহ—আর হাসিমুখে বলছিলেন নিজের গল্প।

গত তিন দশক ধরে ইউএই-তে বসবাস করছেন সাবির ফাতিহ। আল আইনে একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটের এক কোণে তিনি বানিয়েছেন নিজের কর্মশালা। সেখানে প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক পাথর—আগেট, টারকোয়িজ, অ্যাম্বার, রোজ কোয়ার্টজ আর হেমাটাইট—দিয়ে তৈরি করেন অনন্য সব তাসবিহ। কোনোটি নিজের হাতে ডিজাইন করেন, আবার কোনোটি অর্ডার অনুযায়ী বানান।
তিনি বলেন, ‘আমি পাথরগুলো নিজের হাতে গড়ি না, সাইজ ঠিক করতে আর সুতো গেঁথে নিতে ঘরে মেশিন আছে। অনেকে বিশেষ ডিজাইন চান, আমি তা কাস্টমাইজ করে দিই।’

ছোটবেলা থেকে তাসবিহের প্রতি সাবিরের আগ্রহ। তিনি বলেন, ‘মানুষকে যখন জিকির করতে দেখতাম, সেই শান্ত মুখগুলো আমাকে টানত। ভাবতাম, এসব তাসবিহ কে বানায়? কখনো ভাবিনি, একদিন আমি নিজেই তা বানাব।’
প্রথমে নিজের জন্য, পরে বন্ধুর জন্য, আর এখন সবার জন্য তাসবিহ বানান তিনি। তার তৈরি তাসবিহ এখন বিক্রি হয় দেশজুড়ে—বিভিন্ন প্রদর্শনী, সংস্কৃতি মেলা ও অনলাইনে।
সাবির বলেন, ‘মানুষ আমার গল্প শোনে, তাসবিহ হাতে নেয়, আর বলে—শান্তি পেয়েছি। তখন মনে হয়, আমি যেন শান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছি।’
জীবনের এই পথচলায় সবচেয়ে বড় সহযোগী তার স্ত্রী। তিনি পাথর প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে অনলাইনে বিক্রি পর্যন্ত সবকিছুতেই সাহায্য করেন।
তার স্ত্রী বলেন, ‘সে একাই সুতো গাঁথে, ডিজাইন করে, সব করে। আমি শুধু সেই কাজগুলো করি যেগুলো দু’হাতে করতে হয়। আমরা একসঙ্গে এই কাজটা গড়ে তুলেছি।’

অর্ডার ডেলিভারিতেও তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকেন- ‘যদি কেউ আসতে না পারে, আমরা নিজেই পৌঁছে দিই। আমাদের প্রত্যাশা যারা তাসবিহ ভালোবাসেন, তাদের কাছে যেন পছন্দের জিনিসটি পৌঁছে যায়।’
সাবির বলেন, ‘এই কাজ শুধু জীবিকা নয়, ইবাদতের অংশও। প্রতিটি তাসবিহ বানানোর সময় মনে হয়—আল্লাহর জিকির করছি, ধৈর্য শিখছি, কৃতজ্ঞ হচ্ছি। এতে আমি রিজিকও পাই, আবার আখিরাতের পুরস্কারও আশা করি।’
সাবিরের দুই মেয়ে থাকেন জর্ডানে। তারা বাবার কাজ নিয়ে গর্ব করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরা বলে, বাবা, তুমি শক্তিশালী। তাদের এই কথা আমাকে আরও শক্তি দেয়‘, হাসিমুখে বলেন তিনি।
সূত্র : খালিজ টাইমস
এনটি