মাকামে ইব্রাহিমের ইতিহাস

কাবা শরিফ তাওয়াফরত হাজিরা যখন ‘মাকামে ইবরাহিম’–এর সামনে পৌঁছান, তখন তাদের চোখে ধরা পড়ে ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন—হজরত ইবরাহিম (আ.)–এর পদচিহ্ন। কাবা নির্মাণের সময় এই পবিত্র পাথরেই দাঁড়িয়ে কাজ করেছিলেন তিনি।
পবিত্র মক্কার হৃদয়ে কাবা শরিফের দরজার সামনে প্রায় ১০ থেকে ১১ মিটার দূরে অবস্থিত এক ছোট পাথর—মাকামে ইবরাহিম। ইসলামের প্রাচীনতম নিদর্শনগুলোর একটি এটি। চার হাজার বছরের পুরোনো এই পাথরটি নবী ইবরাহিম (আ.)–এর পায়ের ছাপ বহন করছে আজও।
পাথরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার। মাঝখানে দুটি ডিম্বাকৃতির খাঁজ রয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যায় নবী ইবরাহিম (আ.)–এর পদচিহ্ন।
ইতিহাসবিদদের মতে, কাবার দেয়াল যখন উঁচু হতে থাকে, তখন ইবরাহিম (আ.) এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে দেয়াল নির্মাণ করেন। তিনি তার পুত্র ইসমাইল (আ.)–এর কাছ থেকে পাথর সংগ্রহ করে কাজ চালিয়ে নেওয়ার সময় পাথরটি অলৌকিকভাবে উপরে নিচে নড়াচড়া করত।
আরও পড়ুন
মক্কার ইতিহাস গবেষক ড. সামির আহমেদ বারকাহ আরব নিউজকে বলেন, এটি এমন এক পাথর, যার ভেতর নবী ইবরাহিম (আ.)–এর পায়ের ছাপ আজও অক্ষত আছে। মাকামে ইবরাহিম ও হাজরে আসওয়াদ—এই দুটি নিদর্শনই ইসলামের প্রাচীনতম ও পবিত্রতম স্থাপনা।
বর্তমানে মাকামে ইবরাহিমকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ফ্রেমে স্থাপন করা হয়েছে এবং একটি স্বচ্ছ কাচের গম্বুজে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)–এর সময় মক্কায় ভয়াবহ নাহশাল বন্যায় পাথরটি স্থানচ্যুত হয়ে গেলে তিনি এসে একে পুনরায় স্থায়ীভাবে বর্তমান অবস্থানে স্থাপন করেন।
একসময় এই নিদর্শনটি ক্ষতি ও চুরি থেকে রক্ষার জন্য ধাতব আবরণে রাখা ছিল। পরবর্তীতে তা সরিয়ে কাচের ঘের তৈরি করা হয়, যাতে প্রত্যেক হাজি ও তাওয়াফকারী স্পষ্টভাবে এই ঐতিহাসিক চিহ্ন দেখতে পারেন।
ইতিহাস গবেষক সাঈদ আশ-শরীফ জানান, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয়ের পর কাবার চারপাশে তাওয়াফ সহজ করার জন্য পাথরটি এর আগের অবস্থান থেকে ১০ মিটারেরও বেশি দূরে সরিয়ে বর্তমান স্থানে রাখার নির্দেশ দেন।
আজও বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান কাবা শরিফ তাওয়াফের সময় নবীর পদচিহ্নে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মাকামে ইবরাহিমের সামনে থমকে দাঁড়ান।
সূত্র : আরব নিউজ
এনটি