দাঁতের সুরক্ষায় মিসওয়াকের গুরুত্ব

প্রত্যেক নামাজের আগে মিসওয়াক করা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অভ্যাস ছিল। আধুনিক বিজ্ঞানও তার এই অভ্যাস ও সুন্নাহ অনুসরণকে সমর্থন করে। মিসওয়াকের কয়েকটি সুবিধা হলো—এতে টুথপেস্ট, পানি বা দাঁত পরিস্কারের পর ময়লা ফেলার জন্য আলাদা জায়গার প্রয়োজন হয় না।
দাঁতের গুরুত্ব
দাঁত হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কথা বলা এবং মুখের গঠন বজায় রাখার ক্ষেত্রেও দাঁত অপরিহার্য। দাঁত না থাকলে মানুষ স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারত না, এমনকি খাবার চিবাতেও পারত না। এতে হজমের সমস্যা হতো।
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও শরীরের সবচেয়ে অবহেলিত অঙ্গ হলো দাঁত। অথচ দাঁত পরিষ্কার রাখা খুব কঠিন কিছু নয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া ও মিষ্টি বর্জন করা দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য সহজ উপায়।
ডেন্টাল ক্যারিস বা দাঁতের ক্ষয় হলো দাঁতের সবচেয়ে সাধারণ রোগ। যারা প্রচুর মিষ্টি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খান এবং পরে দাঁত ব্রাশ করতে ভুলে যান বা করতে চান না তারা সহজেই দাঁতের ক্ষতের শিকার হন।
কীভাবে দাঁতের ক্ষয় হয়
খাবার চিবানোর সময় খাবারের ছোট ছোট অংশ দাঁতের ফাঁকে আটকে যায়। দীর্ঘ সময় সেগুলো দাঁতের নিচে পড়ে থাকলে তা পচে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে, এতে করে দাঁতে গর্ত হয়। অনেকেই দাঁতের ক্ষতি বুঝতে পারেন না। যখন বুঝেন, তখন দাঁত উপড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না।
অপরিচ্ছন্ন দাঁত মুখের দুর্গন্ধ ছাড়াও ম্যালোক্লুশন, পেরিওডন্টাল ডিজিজ, এমনকি মুখগহ্বরের ক্যানসার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
দাঁত পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব
মিষ্টিজাত খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব ১৯৩৮ সাল থেকেই নথিবদ্ধ। শিল্পোন্নত দেশে সচেতনতার কারণে দাঁতের ক্ষয় কমছে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে যেখানে আগে দাঁতের ক্ষয় কম দেখা যেত এখন তা বাড়ছে।
আধুনিক সভ্যতার প্রভাবমুক্ত জাতিগোষ্ঠীর দাঁত সাধারণত সুন্দর থাকে, আর ‘সভ্য’ সমাজের দাঁতের অবস্থা তুলনামূলক খারাপ। এর মূল কারণ ব্রাশ করার অভ্যাস নয়, বরং খাদ্যাভ্যাস।
গবেষকদের মতে, দামি ব্রাশ, পেস্ট ব্যবহারের কারণে শুধু দাঁত ভালো থাকে না, বরং প্রতিবার খাবারের পর নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করার কারণে দাঁত ভালো থাকে।
প্রাচীন ও অনুন্নত জাতিগোষ্ঠী কীভাবে দাঁত পরিষ্কার করত?
- আমেরিকান ইন্ডিয়ানরা কাটাযুক্ত এক ধরনের গাছের বাকল ব্যবহার করত।
- মোহ্যাভি মরুভূমির অধিবাসীরা এক ধরনের ওষুধি ভেষজ ব্যবহার করত।
- ভারতীয় গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত হতো নিমের ডাল।
মুসলমানদের মিসওয়াক
বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় মুখে দুর্গন্ধ থাকলে যেমন তা শ্রোতার জন্য কষ্টকর তেমনি নামাজে আল্লাহর মুখোমুখি হওয়ার সময় মুখ পরিষ্কার না থাকাটাও অকল্পনীয়।
মুসলমানরা দাঁত পরিষ্কারের জন্য এক ধরনের ডাল ব্যবহার করেন। তাকে মিসওয়াক বা সিওয়াক বলা হয়। এটি চিবিয়ে নরম করে ব্রাশের মত ফাইবার তৈরি করা হয়। এতে লুকায়িত ভেষজ গুণ বের হয়।
মিসওয়াকের সুবিধা :
- টুথপেস্ট লাগে না।
- পানি লাগে না।
- যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়।
- সহজে বহনযোগ্য।
- পরিবেশবান্ধব।
- ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া যায়।
অনেকে মনে করেন মিসওয়াক টুথব্রাশের চেয়েও কার্যকর। এর বাইরেও মিসওয়াক ব্যবহারের সবচেয়ে বড় কারণ হলো এটি সুন্নাহ।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের উপর কষ্টের ভয় না থাকলে, আমি তাদের প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করতে আদেশ করতাম। (সহিহ মুসলিম)
গবেষকদের মতে, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি।
এনটি