ক্ষত থেকে রক্ত ঝরতে না দিয়ে মুছে ফেললে অজু ভাঙবে?

অজুর পরে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়। কিন্তু গড়িয়ে পরার আগেই বারবার মুছে ফেললে কী অজু ভাঙবে? ফেকাহবিদদের মতে, যদি শরীরের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত, পুঁজ অথবা পানি বের হয়ে নিজ স্থান অতিক্রম হয়ে একটু গড়িয়ে পড়ে, তাহলে অজু ভেঙ্গে যায়। নতুন করে অজু করার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু কেউ যদি রক্ত বের হওয়ার পর গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে ফেলে অথবা তার ওপর কোন ব্যান্ডেজ বা পট্টি লাগিয়ে দেয়, তাহলে দুই অবস্থায় দুই বিধান হবে।
১. যদি রক্ত এতোটুকু বেশি হয় যে, ওই ব্যক্তি না মুছলে অবশ্যই গড়িয়ে পড়তো, তাহলে তার অজু ভেঙ্গে গেছে। নতুন করে আবার অজু করতে হবে।
২. আর যদি এতো সামান্য রক্ত বের হয় যে, তা না মুছলে গড়িয়ে পড়তো না, তাহলে অজু ভাঙবে না।
অজু ভঙের কারণ
মৌলিকভাবে অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথাক্রমে-
এক. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া
যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া, হাদিস : ১/৭)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০৬ )
আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।’ (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস : ৫৬৮)
দুই. রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)
আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১১০)
তিন. মুখ ভরে বমি করা
আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২২১)
চার. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
হাসান বসরি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৩৩০)
পাঁচ. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০২)
ছয়. পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে
হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৯৩)
সাত. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে
ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’ (সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)
এনটি