এ বছরও কি নামাজ সব কাজার খাতায়?

আরেকটি বছর শেষের পথে। দিনপঞ্জিকার পাতায় হয়তো আমরা হিসাব করছি কতটা লাভ হলো, কী হারালাম, কী পেলাম। কিন্তু নিজের সঙ্গে সৎ হয়ে যদি প্রশ্ন করি, তাহলে কি সাহস করে বলতে পারব এই বছরে আমার নামাজ ঠিক ছিল? নাকি আগের মতো এবারও নামাজের বড় অংশ চলে গেছে কাজার খাতায়?
নামাজ কোনো অতিরিক্ত ইবাদত নয়, কোনো ঐচ্ছিক আমলও নয়। এটি ইসলামের মূল স্তম্ভ। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো নামাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন, নামাজ ঠিক থাকলে বাকি আমলও ঠিক হবে, আর নামাজ নষ্ট হলে সবই নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ইবাদত হলো ফরজ নামাজ।
সকালবেলা ফজরে অ্যালার্ম বাজে, কিন্তু ঘুম ছাড়তে মন চায় না। ভাবি আরও পাঁচ মিনিট। পাঁচ মিনিট গড়িয়ে ত্রিশ মিনিট, তারপর সূর্য উঠে যায়। শুরু হয় কাজার হিসাব। জোহর কেটে যায় অফিসের ব্যস্ততায়, আসর যানজটে, মাগরিব বাজারে কিংবা আড্ডায়, আর এশা ছুটে যায় ক্লান্ত শরীরের অজুহাতে। এভাবেই একের পর এক নামাজ যুক্ত হয় কাজার খাতায়। দিন শেষে দেখা যায় নিয়মিত পড়া নামাজের সংখ্যা খুবই কম।
আমরা অনেকেই কাজা নামাজকে হালকা করে দেখি। মনে করি, পরে পড়ে নিলেই তো হলো। কিন্তু নামাজের মূল সৌন্দর্য সময়ের ভেতর আদায় করায়। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনদের ওপর ফরজ। অথচ আমাদের অনেকের জীবনে কাজাই যেন নিয়ম, আর সময়মতো নামাজ পড়া ব্যতিক্রমী চিত্র।
নামাজ আমাদের জীবনের শৃঙ্খলা, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি। যে ব্যক্তি নিয়মিত নামাজে পড়ে, তার জীবনে অশ্লীলতা ও অন্যায় ধীরে ধীরে কমে আসে। সাহাবায়ে কেরাম নামাজকে ঈমান ও কুফরের মাঝখানের পার্থক্য হিসেবে দেখতেন।
এখন প্রশ্ন হলো, সমাধান কী? প্রথমত, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নামাজকে জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হবে। কাজ, ব্যবসা, পড়াশোনা, সবকিছু নামাজের সময়কে ঘিরে সাজাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সব সময় অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করতে হবে, আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
নতুন বছর আসছে। এই বছরটা কি শুধু ক্যালেন্ডার বদলের বছর হবে, নাকি আত্মশুদ্ধির সূচনা হবে? এ বছরও কি নামাজ সব কাজার খাতায় জমা হবে, নাকি সময়মতো আল্লাহর সামনে দাঁড়াবো? এখন থেকেই সেই প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করুন, নামাজের হিসাব শুধু বছরের শেষে নয়, একদিন আমাদের পুরো জীবনের হিসাবের অংশ হয়ে দাঁড়াবে। তখন যেন আফসোস করতে না হয়, তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
এনটি