কিং ফয়সাল মসজিদের যে দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে

বিখ্যাত কিং ফয়সাল মসজিদ। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত। এটি পাকিস্তানের অন্যতম জাতীয় স্থাপনা ও ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়। ধারণ ক্ষমতার বিচারে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মসজিদ।
ইসলামী স্থাপত্যশৈলীতে মসজিদ নির্মাণের কমন আইডিয়া— যেমন- মার্বেলের গম্বুজ, প্রশস্ত খিলান ও করিডোর এবং মিনারের ওপর অর্ধ চন্দ্রাকৃতির কারুকার্য ইত্যাদি প্রতীক বর্জন করে— আরবের বেদুইন তাবুর আদলে নির্মিত হয় বিখ্যাত বাদশাহ ফয়সাল মসজিদ।
প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সফরে যান। তখন তৎকালীন পাক সরকারের অনুরোধে বাদশাহ এই মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেন। মরুভূমিতে নির্মিত বেদুইনের তাবুর আদলে মসজিদ নির্মাণের পরামর্শ দেন তিনি।
বাদশাহর পরামর্শের আলোকে মসজিদের জন্য দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন প্রণয়নের জন্য পাক সরকার বিশ্বের বিখ্যাত স্থপতিদের কাছে ডিজাইন আহ্বান করে। ১৯৬৯ সালে মসজিদের নকশা নির্বাচনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় ১৭ টি দেশের ৪৩ জন প্রকৌশলী অংশ গ্রহণ করে। তুরস্কের স্থপতি বেদাত ডালোকের ডিজাইনের নকশা প্রথম স্থান অর্জন করে। তার নকশায় নির্মিত হয় এই মসজিদ।
আরও পড়ুন : মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য অনুষদের মেধাবী শিক্ষার্থী স্থপতি বেদাত ডালোকের ডিজাইনের পৃথিবীর বেশকিছু বিখ্যাত স্থাপনা তৈরি হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সৌদি আরবের রিয়াদে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রধান ভবন (১৯৮০ সাল) এবং কিং ফয়সাল মসজিদ ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কমপ্লেক্স (১৯৮৪ সাল)।
দৃষ্টিনন্দন ও সুবিশাল এই মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হয় ১২০ মিলিয়ন ডলার। সময় লাগে প্রায় ১০ বছর। ১৯৮৬ সালে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। এরপর ১৯৮৭ সালের ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে মসজিদটি উদ্বোধন হয়।

পাঁচ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদে একসাথে তিন লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে একসাথে। নামাজ আদায়ের প্রধান ফ্লোর ও করিডোরে এক লাখ আর অবশিষ্ট দুই লাখ পাশের উন্মুক্ত মাঠে। মসজিদে একটি গ্রন্থাগার, একটি হল রুম, একটি যাদুঘর ও একটি ক্যাফে রয়েছে।
আধুনিকতা ও স্বতন্ত্রতায় অনন্য এই মসজিদের স্থাপত্য নকশা। বিশ্বের বেশিরভাগ মসজিদের মতো ঐতিহ্যবাহী গম্বুজ নেই। বেদুইন তাবুর আকৃতি অনুকরণে এর নকশা একটি ৮ পার্শ্বযুক্ত কংক্রিট কাঠামো নিয়ে গঠিত। এখানে ভ্যাকুয়াম গ্রিড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। ৬১ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি বর্গক্ষেত্রের ওপর মসজিদের দেয়ালগুলো সংযুক্ত। সম্পূর্ণ নতুন আইডিয়ায় সুউচ্চ ৪টি মিনার রয়েছে। গম্বুজবিহীন এই মসজিদে আটটি ঢালু ছাদ রয়েছে। মসজিদের দেয়াল থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত সূর্যের আলো প্রবেশের এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, মনে হয়— সর্বত্র লাইট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের যেকোনো জায়গা থেকে উচুঁ মিনারসহ মসজিদটি দেখা যায়। মসজিদের স্থান নির্বাচন করেন সাবেক পাক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। এই স্থানটি নির্বাচনে তার উদ্দেশ্য ছিল- লাহোরের পর অন্য আরেকটি আধুনিক শহর তৈরি করা।
মসজিদটি ইসলামাবাদের উত্তরে মনোহর মারগালা পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। মারগালা হিমালয় পর্বতের অংশ। আর মনোমুগ্ধকর মারগালা হলো- পাকিস্তানের জাতীয় পার্ক। মসজিদের তিন দিকে সবুজ বনবেষ্টিত পাহাড়। আর এক দিকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো ইসলামাবাদ শহর। মসজিদের চার দিকে বিশাল খোলা চত্বর রয়েছে। ওপর থেকে দেখলে সাজানো ছবির মতো মনে হয় মসজিদটিকে। মসজিদে যাওয়ার ফয়সাল অ্যাভিনিউর দুই পাশ মনোরম ফুলগাছে সাজানো। মসজিদের প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ প্রত্যেক আগন্তুককে মুগ্ধ করে। মুসল্লিদের হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ ছড়িয়ে দেয়।
লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, কক্সবাজার।