নিজের গল্প ক্লাসের বইয়ে, আনন্দের শেষ নেই মেয়েদের
খেলার মাঠ ছাপিয়ে এবার পাঠ্যবই রাঙিয়েছেন সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্ডা, তহুরা খাতুনরা। উচ্চ মাধ্যমিকের ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ের অধ্যায় ৫- এ ৮৮ নম্বর পৃষ্ঠায় দেওয়া হয়েছে তাদের বড় ছবি, দু’হাত মেলে গোল উদযাপনে ব্যস্ত জাতীয় দলের মিডফিল্ডার মারিয়া মান্ডা।
‘দ্য আনবিটেন গার্লস’ (অপরাজেয় মেয়েরা) এই শিরোনামের গল্পে বলা হয়েছে মারিয়া, সানজিদাদের লড়াই সংগ্রামের গল্প। চারটি পৃষ্ঠার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এলাকার গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উঠে আসা একদল কিশোরীর সাফল্যের গল্প। যাদের পায়ের জাদুতে আলো ফুটেছে ধুঁকতে থাকা নারী ফুটবল দল।
শুধু তহুরা, মারিয়া, সানজিদাই নয়, পাঠ্যবইয়ে এসেছে শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নাজমা আক্তার, মার্জিয়া আক্তারদের কথাও। লেখা হয়েছে অকালে মৃত্যুবরণ করা সাবিনা খাতুনকে নিয়েও। বাদ যাননি শিক্ষক-কোচও। বইয়ের পাতায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের অদম্য অপরাজেয় একঝাঁক কিশোরীর গল্প নিয়ে বিশেষ পাঠ রাখায় গর্বিত কলসিন্দুর তথা ময়মনসিংহবাসী।
এবারই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন কলসিন্দুরকন্যা ফুটবলার তহুরা খাতুন। বইয়ের পাতা উল্টে নিজের ছবি দেখে চমকে উঠেন তিনি। নিজের গল্প পাঠ্যবইয়ে দেখে অন্যরকম উচ্ছ্বাস তার মনে। তহুরা বলেন, ‘আমি এ বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। আমার গল্প আমি নিজেই বইয়ে পড়বো। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে। আমাদের বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে তুলে ধরায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
একাদশ শ্রেণির অন্য শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের আপুদের গল্প আমরা পড়ছি। এটা অনেক গর্বের, অনেক আনন্দের। আমরাও তাদের অনুসরণ করে এভাবেই সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’
কলসিন্দুর সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বইটিতে অনেক সুন্দর করে কিশোরী ফুটবলারদের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে। যা দেখে সত্যিই আমরা অভিভূত। একটার পর একটা সাফল্য পাচ্ছি আমরা। মেয়েদের সাফল্যের বিষয়গুলো আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে।’
কলেজের সহকারি অধ্যাপক এবং নারী ফুটবল টিমের টিম ম্যানেজার মালা রানী সরকার বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে আমাদের মেয়েদের সাফল্যের কথা লেখা হবে তা আমরা কোনোদিন ভাবতে পারেনি। বিগত দেড় বছর ধরে তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করছিলেন অধ্যাপক গৌতম রায়। বিভিন্ন তথ্যের জন্য তিনি প্রায়ই আমাকে কল দিতেন। সরকারের কাছে আর আমাদের তেমন কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। প্রত্যাশার চেয়ে আমরা অনেক বেশি পেয়েছি। প্রধানন্ত্রী সবসময় সুস্থ থাকুক এই কামনা করি।’
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তহুরা আক্তারের বাবা ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের গল্প-ছবি বইয়ে দেখে আমরা খুব খুশি এবং এই মেয়েদের কারণেই আজ কলসিন্দুর নাম দেশবাসীর কাছে পরিচিতি পেয়েছে। তারা যেন আরও সাফল্য এনে দিতে পারে দেশকে সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
প্রয়াত সাবিনার মা ফজিলা খাতুন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার মেয়েটাকেও তিনি ভুলেননি। তবে আজ যদি আমার মেয়ে বেঁচে থাকতো তাহলে অন্যসবার মতো সে-ও খুব খুশি হতো।’
এদিকে কলসিন্দুরকন্যাদের সাফল্য ধরে রাখতে তাদের পাশে থেকে সকল ধরণের সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন প্রশাসন। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘মেয়েরা দেশের জন্য অসাধারণ সাফল্য দেখানোর বদৌলতে পাঠ্যপুস্তকে তাদের নিয়ে লেখা হয়েছে। কলসিন্দুরের কিশোরীদের জন্য জন্য পাঁচ লাখ টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। যে কোন প্রয়োজনে তারা যেন টাকাটা খরচ করতে পারে।’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস বলেন, ‘কলসিন্দুরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সবসময় আমরা পাশে থাকব। পাঠ্যপুস্তকে মারিয়াদের নাম আসা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। ওদের পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে। আশা করছি খেলোয়াড়রা আরও বেশি মনোযোগী হবে।’
উবায়দুল হক/এটি/এমএইচ