মেসিদের বিদায়ের শঙ্কায় ফেললো সেভিয়া

ইয়াসিন বনোতে যেন লেভ ইয়াশিনের আত্মাই ভর করে বসেছিলো! নাহয় লিওনেল মেসির দুর্দান্ত তিনটে শটের একটাও কেন জালে জড়াল না সেভিয়ার বিপক্ষে? মেসি না হাসলে হাসে না বার্সা। আন্দালুসিয়ান দলটির কাছে রক্ষণাত্মক ভুলের খেসারত দিয়ে শেষ চারের প্রথম লেগে ২-০ গোলে হেরেছে দল, কোপা দেল রের সেমিফাইনাল থেকে বিদায়ের শঙ্কাও তাই জোরেশোরেই চেপে বসেছে কাতালান দলটিতে।
শেষ এক মাসে চারটি ম্যাচ অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে খেলেছে রোনাল্ড কোম্যানের দল। তার অবসাদ যে চেপে বসেছে কাতালান দলটিতে সেটা স্পষ্ট ছিল সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই। মেসিদের শুরুটা হলো একটু ঢিলেঢালাভাবে। তবু ১১ মিনিটে প্রথম সুযোগটা এসেছিল ‘লা ব্লাউগ্রানাদের’ কাছেই। অ্যান্টোয়ান গ্রিজমানের উঁচিয়ে বাড়ানো বল খুঁজে নিয়েছিল বার্সা অধিনায়ককে। প্রতিপক্ষ বিপদসীমায় মেসির করা বাঁ পায়ের শটটা রুখে দেন বনো।
এরপরই যেন ম্যাচে ফিরতে থাকে স্বাগতিক সেভিয়া। ১৯ মিনিটে সুযোগ অল্পের জন্য নষ্ট করা জুলস কুন্দে জ্বলে ওঠেন ২৫ মিনিটে। স্যামুয়েল উমতিতির মার্কিংকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তার করা কোণাকুণি শটের কোনো জবাব ছিল না বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনের কাছে।
বিরতির আগে আরও একবার পা হড়কাল বার্সা রক্ষণ। নিজেদের বক্সে যখন বলটা পেলেন এস্কুদেরো, তার ধারেকাছেও ছিলেন না উমতিতি কিংবা অস্কার মিনগেসাদের কেউ। স্টেগেন ছিলেন বলে রক্ষা, তার দারুণ এক সেভে বিরতির আগে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েনি বার্সা।
বিরতির পর আবারও সু্যোগ আসে বার্সার। তবে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান সেই বনো। ৫৫ মিনিটে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে বক্সের বাইরে থেকে মেসির শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক।
এরপর এক গোলের লিড ধরে রাখতে সেভিয়া কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে প্রতি-আক্রমণের কৌশল বেছে নেয়। ৮৫ মিনিটে আসে সফলতা। নিজেদের অর্ধ থেকে অলিভার তরেসের বাড়ানো বল খুঁজে পায় ইভান রাকিটিচকে, সাবেক বার্সেলোনা মিডফিল্ডার প্রতিপক্ষ রক্ষণকে পেছনে ফেলে দারুণ এক শটে গোল করে কাতালানদের বিদায়ের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেন।
ম্যাচের আগে রাকিটিচ বলেছিলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি, বার্সা সবসময় থাকবে আমার অন্তরে।’ তার প্রমাণই যেন দিলেন গোলের পর। দুই গোলে এগিয়ে যখন সেভিয়া খেলোয়াড়রা আনন্দে আত্মহারা, সেই আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেয়া ক্রোয়াট মিডফিল্ডার তখন একেবারে নিশ্চুপ, করলেন না গোল উদযাপন!
হার ততোক্ষণে নিশ্চিত। তবে একটা অ্যাওয়ে গোল নিয়ে ফিরতে পারলে পরের লেগের কাজটা সহজ হয়ে যেত বার্সার। সেভিয়া গোলরক্ষক বনো সেটাও হতে দেননি। মেসির দারুণ এক নিচু ফ্রি কিক ঠেকিয়ে দলের ২-০ গোলের জয় নিশ্চিত করেন মরোক্কান এই গোলরক্ষক।
সব প্রতিযোগিতায় টানা ছয় ম্যাচ জিতে উড়ছিল যেন বার্সা। তবে সেই কাতালানদের মাটিতে নামিয়ে আনলো সেভিয়া। তবে মেসিদের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি একেবারে। ৩ মার্চের ফিরতি লেগটায় ৩-০ গোলে জিতলেই ফাইনালে উঠে যাবে কোম্যানের শিষ্যরা। শেষবার যখন কোপা দেল রের ফাইনালে খেলেছিল বার্সা, সেমিফাইনালের প্রথম লেগে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে পরের লেগে ৬-১ ব্যবধানে জিতেই উঠেছিলেন মেসিরা। প্রতিপক্ষ ছিল এই সেভিয়াই! ঘরের মাঠের ফিরতি লেগে যে সে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই চাইবে বার্সা, তা বলাই বাহুল্য!
এনইউ