হকিতে আম্পায়ার্স বোর্ড ও ফেডারেশনের দ্বৈরথ!

ঘরোয়া হকিতে আম্পায়ারিং নিয়ে বরাবরই আলোচনা-সমালোচনা থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে আম্পায়ার মনোনীত নিয়ে আম্পায়ার্স বোর্ড ও ফেডারেশনের মধ্যে বেশ দূরত্ব ও সংকট দৃশ্যমান।
ব্যাংককে এশিয়ান গেমস বাছাইয়ে আম্পায়ার্স বোর্ড আম্পায়ার হিসেবে মনোনীত করেছিল আব্দুস সামাদ মামুনকে। ফেডারশেনের নির্বাহী কমিটির সভায় মামুনের পরিবর্তে মোহাম্মদ আলী খান পিয়ালকে আম্পায়ারের জন্য মনোনীত করা হয়। এই প্রসঙ্গে আম্পায়ার্স বোর্ডের সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘আম্পায়ার্স বোর্ড পারফরম্যান্স ও সব কিছু বিচার বিবেচনা করে মামুনের নাম দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাহী কমিটির সভায় পিয়ালের নাম অনুমোদন হয়।’
আম্পায়ার্স কমিটির নামের বাইরে অন্য একজনের নাম অনুমোদন হওয়ার কারণ সম্পর্কে ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউসুফ বলেন, ‘আম্পায়ার্স বোর্ডকে ছয় জনের নাম দিতে বলা হয়েছিল। তারা শুধুমাত্র একজনের নাম দিয়েছে। নির্বাহী কমিটির সভায় এশিয়া কাপ বাছাইয়ে যে দুই জন আম্পায়ারিং করেছে। তাদের পারফরম্যান্স বিচার করা হয়েছে। রনির মার্কিং ছিল ৬৮, পিয়ালের ৫৮। ম্যাচের গড়ে পিয়াল এগিয়ে থাকায় ও আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় নির্বাহী কমিটির সভায় পিয়ালের নাম অনুমোদন হয়।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কিসমতের বক্তব্য, ‘জন্মলগ্ন থেকে আম্পায়ার্স বোর্ড একটি নামই দিয়ে আসছে। নির্বাহী কমিটির সভায় সেটিই অনুমোদন পায়। এবার একটি নাম দিলেও গত বার এশিয়া কাপ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি নাম দেয়া হয়েছিল চিঠির প্রেক্ষিতেই। পারফরম্যান্স ও সামগ্রিক বিশ্লেষণ করে বোর্ড সিরিয়াল করে নাম দিয়েছিল। এক নম্বর সিরিয়ালধারীকে মনোনীত না করে অন্যকে মনোনীত করা হয়েছিল।’
জাকার্তায় এশিয়া কাপ বাছাইয়ে আম্পায়ার্স বোর্ডের তালিকায় এক নম্বর ছিলেন রনি। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি তিন নম্বরে থাকা পিয়ালকে মনোনীত করেছিল। এরপরও আম্পায়ার রনি ব্যক্তিগত খরচে জাকার্তায় গিয়েছিলেন। এশিয়ান হকি ফেডারেশন তাকে কয়েকটি ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ দিলেও ফেডারেশনের অনুমতি না নিয়ে যাওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই বহিষ্কারাদেশ অবশ্য গত নির্বাহী কমিটির সভায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আম্পায়ার্স বোর্ডের সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিসমত ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সম্পাদকও। আম্পায়ার মনোনয়ন সিদ্ধান্তে দ্বিমত থাকলে সভায় নোট অফ ডিসেন্ট ( আমি এই সিদ্ধান্ত মানি না) দেননি কেন প্রশ্ন ফেডারেশনেরই একাংশের । এর প্রেক্ষিতে তার বক্তব্য, ‘সভায় আমি এই বিষয়ে যথেষ্ট বক্তব্য দিয়েছি এবং এটি লিখিতও রয়েছে।’
হকি এখনো অনেকটা পুরান ঢাকা নির্ভর। আম্পায়ার্স বোর্ডের সম্পাদক সাবেক তারকা খেলোয়াড় কিসমত পুরান ঢাকার এবং ১৪ জনের কমিটির অনেকেই সেই এলাকার এর মধ্যে আত্মীয়ও রয়েছে। এ নিয়ে ফেডারেশনের একাংশ কর্মকর্তারা ‘পারিবারিক কমিটি’ বলে টিপ্পনীও কাটেন।
সমালোচকদের মন্তব্যের কড়া জবাব কিসমতের, ‘ইসা-মুসা; আয়েশ-কায়েশ ভাইরা জাতীয় দলে যোগ্যতা দিয়েই খেলেছে। তাহলে জাতীয় দল কি পারিবারিক দল হয়ে গিয়েছিল? আমার কমিটিতে যারা আছে সবাই অত্যন্ত যোগ্য। যোগ্যতার বাইরে একজনও নেই। সাব কমিটির চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি ১-২ জন ব্যক্তি কো অপ্ট করতে পারেন। আমি কো-অপ্ট করেছি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা আম্পায়ার আসলাম বেলিমকে। তার মতো ব্যক্তিত্বকে কমিটিতে রাখা কি অপরাধ?’
হকি অঙ্গনে গ্রপিং-দ্বন্দ্ব সমান্তরালভাবেই চলে। আম্পায়ার্স বোর্ড ও ফেডারেশনের মধ্যে দ্বৈরথ এখন প্রকাশ্যে। এর বাজে প্রভাব পড়েছে আম্পায়ারদের মধ্যেও।
এজেড/এমএইচ/এটি