বাফুফের রেফারিজ কমিটি ভাঙা-গড়া নিয়ে প্রশ্ন

চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে রেফারিং নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সেই আলোচনায় নতুন সংযোজন বাফুফের রেফারিজ কমিটি ভাঙা ও গড়া নিয়ে প্রসঙ্গ। ১১ অক্টোবর নব নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় গুরুত্বপূর্ণ সাব কমিটি হয়। চার মাস পার হওয়ার পরই গুরুত্বপূর্ণ এক সাব কমিটির পতন ও পুনর্জন্ম হলো!
বাফুফের বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন ও ভাঙার এখতিয়ার কার্যনির্বাহী কমিটির। রেফারিজ কমিটির ভাঙা ও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সভাই হয়নি। যদিও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বুধবার এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘কয়েকজনের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
গত মেয়াদে বাফুফের ডেভলপেমন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বাদল রায়। বাদল রায়কে ডেভলপমেন্ট কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল কার্য নির্বাহী কমিটির আনুষ্ঠানিক সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই।
চার মাসের মধ্যেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া রেফারিজ কমিটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও বাফুফে নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন চৌধুরির জানাচ্ছিলেন, ‘দেশের সেরা রেফারিরাই লিগে বাঁশি বাজাচ্ছেন। আমরা শতভাগ নিরপেক্ষ ছিলাম। রেফারি বরাদ্দসহ সব কিছুতে আমরা সুনির্দিষ্ট নীতি অবলম্বন করেছি। এরপরও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লিগের ও ফুটবলের স্বার্থে কমিটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
লিগে কয়েকটি ম্যাচে রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিদায়ী চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে আমরা রেফারিদের সঙ্গে বসতাম। ম্যাচের পরে পর্যালোচনাও করতাম। রেফারিদের দু'একটি অনাকাঙ্খিত ও অনিচ্ছাকৃত বাঁশি বাজানোর দায় তো আর কমিটির নয়। বিদেশ থেকে রেফারি আনা না হলে বিদ্যমান রেফারিদের দিয়েই তো খেলা চালাতে হবে।’
রেফারিজ কমিটির নতুন চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুশের্দীও জাকিরের বক্তব্যের সঙ্গে একমত, ‘আগের কমিটি ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করছিল। মিডিয়ায় লেখালেখি ও ক্লাবগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে সভাপতি এই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আমি যেহেতু লিগ কমিটির চেয়ারম্যান। তাই আমার উপর এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আস্থা রেখেছেন।’
সালাম মুর্শেদী একজন সাংসদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বর্তমানে বিজিএমইএ নির্বাচনে একটি প্যানেলের সমন্বয়ক। ফুটবল ফেডারেশনের আরো দুইটি কমিটি চেয়ারম্যানের ওপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পড়ল। এই প্রসঙ্গে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতির মন্তব্য, ‘নানা ব্যস্ততা থাকলেও আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সুচারুরূপে করার চেষ্টা করি। আশা করি রেফারিজ কমিটির দায়িত্বও ভালো মতো পালন করতে পারব।’
রেফারিং নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। নতুন রেফারিজ কমিটি নিয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল দলের ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলালের বক্তব্য, ‘আমরা রেফারিং নিয়ে ফেডারেশন ও সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। ফেডারেশন বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়ায় ধন্যবাদ। কিন্তু নব কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান (কাজী নাবিল আহমেদ এমপি) দেশের একটি শীর্ষ ক্লাবের সাথে সরাসরি সংযুক্ত। রেফারিজ কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হওয়াই শ্রেয়।’
শেখ জামালের কর্মকর্তার সঙ্গে অনেকটাই একমত রেফারিজ কমিটির নতুন চেয়ারম্যান সালাম মুশের্দীও ‘কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের ( আবাহনী লিমিটেড,ঢাকা) ডাইরেক্টর ইনচার্জ। তিনি ( কাজী নাবিল আহমেদ, এমপি ) আমাদের চেয়েও এক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল। কমিটিতে নাম থাকলেও তিনি নিজেও হয়তো থাকতে চাইবেন না এই কমিটিতে।’
রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজী নাবিল আহমেদ নিজেকে সরিয়ে নিলেও বাফুফের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আর নাবিল যদি কমিটিতে থেকেও যান অদূর ভবিষ্যতে নতুন কোনো প্রশ্নের উদয়ও হতে পারে! সব মিলিয়ে বাফুফের রেফারিজ কমিটি ভাঙা-গড়া নিয়ে তোলপাড় চলছে।
এজেড/এটি/এনইউ