একটা শোক বার্তাও পেলেন না আকবর

জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের গুরু সাতক্ষীরা জেলার তৃণমূলের ফুটবল কোচ আকবর আলি আকস্মিকভাবে মারা গেছেন গত বৃহস্পতিবার। ৭২ ঘন্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও দেশের কোনো ক্রীড়া ফেডারেশন তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শোক প্রকাশ করেনি।
আকবর তার জীবনের অনেক সময় দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে তৈরি করেছেন সাবিনা ও শিরিনদের মতো খেলোয়াড়। দেশের দ্রুততম মানবী ও জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক যার হাতে গড়া, তার যোগ্যতা, নিবেদন কোন পর্যায়ে সেটা বলা বাহুল্য। শুধু ফুটবল, অ্যাথলেটিকস নয়, খো-খোসহ অনেক খেলায় জাতীয় পর্যায়ে তিনি খেলোয়াড় যোগান দিয়েছেন।
বছরের পর বছর তৃণমুলে নিভৃতে কাজ করা আকবরকে জীবদ্দশায় কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। ক্রীড়া লেখক-সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি তাকে ২০২১ সালে সেরা তৃণমূলের কোচ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই স্বীকৃতি গ্রহণের ২৪ ঘন্টা আগেই পৃথিবী ছেড়ে যান এই গুণী ব্যক্তিত্ব।
ক্রীড়া লেখক সমিতির স্বীকৃতি নিজের হাতে নিতে পারেননি আকবর। তার পদক গ্রহণ করেছেন তার শিষ্য সাবিনা খাতুন৷ আয়োজকরা আকবরের জন্য এক মিনিট শোক পালন করেছিল৷ যে খেলাগুলোর জন্য আকবর জীবনে এত সময় দিয়েছেন সেই ফেডারেশনগুলো তার জন্য নুন্যতম শোক বিজ্ঞপ্তিও দেয়নি!
বাংলাদেশের ফুটবলের ঝান্ডা এখন সাবিনাদের হাতে। শুধু সাবিনাকে ফুটবলের হাতেখড়ি দেওয়াই নয়, নিজের দুই মেয়েক ফুটবলে দেয়া এবং সারাজীবন নারী ফুটবলের সঙ্গেই ছিলেন আকবর। অন্য ফেডারেশনগুলোর তুলনায় ফুটবল ফেডারেশন শোক, অভিনন্দন বার্তা জানায় বেশি। অথচ নারী ফুটবলে অবদান রাখা এমন একজন ব্যক্তির জন্য বাফুফের কোনো শোক চোখে পড়েনি।
বাংলাদেশ ফুটবল কোচেস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন রয়েছে। সেই সংগঠন থেকেও আকবরের জন্য কোনো বার্তা দেখা যায়নি। আকবর তো একেবারে তৃণমুলের কোচ, জাতীয় পর্যায়ের কোচদেরও এই সংগঠন সেভাবে স্মরণ করে না। ১৪ বছরের বেশি সময় হলেও সংগঠনটির বয়স৷ ফেডারেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলরশিপ নেয়া ছাড়া আর তেমন কোনো ভূমিকায় দেখা যায় না।
ফুটবল ছাড়াও অ্যাথলেটিকস, খো-খোতে অবদান ছিল আকবরের। কোথাও থেকে দেখা যায়নি শোক বার্তা। অথচ কোনো জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কেউ পরপারে গেলে অনেক সময় শোক জানায় ফেডারেশনগুলো। সে সব অনেক শোক বার্তা প্রকাশের অনুরোধও আসে সাংবাদিকদের কাছে। আকবররা এসবের বাইরে; কারণ তারা তো আর কাউন্সিলর হয়ে ভোট দিতে আসেন না!
জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এজিএমে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বরাবর নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছে। নিজেদের সুযোগ-সুবিধা, সম্মানের একটু ঘাটতি হলেই প্রতিবাদী হয়ে উঠে সংগঠনটি। এর নেতারা নিজেদের তৃণমূলের বলে দাবি করলেও আকবরদের মতো কোচদের জন্য তেমন কোনো স্বীকৃতির ব্যবস্থা তো দুরে, শোকবার্তাও সেভাবে চোখে পড়ে না।
সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেন সাংবাদিকেরা। ক্রীড়াঙ্গনেও অনেক অনিয়ম-অসঙ্গতি ফুটে উঠে সাংবাদিকদের কলমে-কন্ঠে। আকবরকে জীবদ্দশায় যখন কেউ স্বীকৃতি দেয়নি, তখন পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠনই প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পরেও অনেক ফেডারেশন, ক্রীড়া সংস্থা শোক না জানালেও সেই সাংবাদিকরাই আকবরের জন্য শোক পালন করেছেন।
এজেড/এটি