স্কুলের সেই গালাতাসারেই ইউরোপসেরা

দুই বছরের বাচ্চা গালাতাসারের জার্সিতে ডাগআউটে হাটছেন। বাবা-মা দুইজনের চোখে মুখে রাজ্যের প্রশান্তি। ক্লাবের প্রতি সমর্থকদের নির্মোহ ভালোবাসার এক প্রতিচ্ছবি। যুগের পর যুগ এভাবেই গালাতাসারেকে ভালোবাসছেন সমর্থকরা।
অন্য ক্লাবগুলো থেকে গালাতাসারের জন্মের গল্পটা একদম ভিন্ন। গালাতেসারে স্কুলের সেই সময়ের শিক্ষার্থী আলী সামি ইয়েন একটি ফুটবল দল গঠনের পরিকল্পনা করেন। তার সঙ্গে স্কুলের অন্য বন্ধুরাও সায় দেন। স্কুলের শ্রেণী কক্ষে এক বৈঠকে গালাতেসারে স্কুলের নামেই জন্ম হয় গালাতেসারে স্পোর্টিং ক্লাবের।
জন্মের সময়েই দলটির স্লোগান ছিল নন-তার্কিশ দলকে হারাতে হবে। সেই স্লোগানের যথার্থ সাধন হয় ২০০০ সালে। স্কুলের একটি কক্ষে জন্ম নেয়া সেই ক্লাবটিই প্রথম এবং একমাত্র তার্কিশ ক্লাব হিসেবে ইউরোপা এবং উয়েফা সুপার কাপ জিতে।

গালাতাসারে ক্লাবের তৃতীয় তলায় সুবিশাল জাদুঘর। সেই জাদুঘরে প্রবেশ করতেই চোখ পড়বে দুই ইউরোপ জয়ী ট্রফি। ২০০০ সাল গালাতেসারের ইতিহাসের সেরা বছর। জাদুঘরে এই সালের নানা ঘটনা ও খেলোয়াড়দের বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ট্রফি জয়ের অন্যতম নায়ক রোমানিয়ান ফুটবলার হ্যাজি। তাকে নিয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও স্থান পেয়েছে জাদুঘরে।
১৯০৫ সালে জন্ম নেয়া ক্লাবটি ২০০৫ সালে পালন করে শতবর্ষ। শতবর্ষী ক্লাবের জাদুঘর এত সুন্দরভাবে সুবিন্যস্ত যে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে নানা ছবিতে ১১৭ বছরের ইতিহাস জীবন্ত। ১৯০৫ সালে ক্লাব জন্মের সাথে জড়িতদের গ্রুপ ছবি যেমন রয়েছে তেমনি সর্বশেষ ট্রফি জয়ী দলেরও।
জাদুঘরের আলাদা এক কোণায় রয়েছে হল রুম। সেই হল রুমে দর্শনার্থীদের গালাতেসারের উপর প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। যেখানে শুরুতেই আছে ক্লাবের জন্মের ইতিহাস। ক্লাবের জন্মদাতা আলী সামি ইয়েন সেখানে মূল চরিত্র। গালাতেসারে ক্লাবের স্টেডিয়ামের নামও এক সময় ছিল আলী সামি ইয়েন।
সময়ের সাথে স্টেডিয়ামের বিবর্তন হয়েছে। স্টেডিয়ামের বিবর্তনের ছবিও ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষিত জাদুঘরে। গালাতেসারের বর্তমান স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে ২০১২ সালে। কয়েক মিলিয়ন তার্কিশ লিরা বিনিয়োগে নতুন স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফেনারবাচের চেয়ে কয়েক হাজার বেশি।

ইস্তাম্বুল শহরেই দুই ক্লাব ফেনারবাচে ও গালাতাসারে। একই শহর হলেও দুই ক্লাব দুই মহাদেশে। এশিয়া ও ইউরোপের অংশ ইস্তাম্বুলে জীবনযাত্রায় যেমন পার্থক্য তেমনি আভিজাত্যেও। সুবিশাল রাস্তার ধারে ক্লাবের গা ঘেঁষে সবুজ ঘাসে লেখা গালাতাসারের নাম। ইস্তাম্বুলে ইউরোপীয় অংশে আভিজাত্যের অন্যতম প্রতীক গালাতাসারে।
মাঠের লড়াইয়ে গালাতেসারের একচেটিয়া আভিজাত্য অবশ্য আর নেই। গত বছর লিগে অবস্থান ছিল দশের পর। বর্তমান অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হলেও তার্কিশ ফুটবলে গালাতাসারের অবস্থান অদ্বিতীয়। তুরস্ক ও তুরস্কের বাইরে তার্কিশ অন্য যে কোনো ক্লাবের চেয়ে তাদের সমর্থক বেশি বলে ধারণা।
ক্লাবের দুঃসময়ে সমর্থকরাই সকল প্রাণ সঞ্চার। গালাতেসারে এক অলিখিত পারিবারিক বন্ধন। তাই তো বংশধরদের নিয়ে সমর্থকরা ক্লাবের মাঠ ও জাদুঘর পরিদর্শন করেন। গালাতেসারে ক্লাবের জন্মই হয়েছিল বন্ধুত্বের ভালোবাসায়। ১১৭ বছর পরেও সমর্থকরা সেই আদর্শ বয়ে বেড়াচ্ছেন। গালাতেসারে সমর্থকরা মতাদর্শে অনেকটা বার্সেলোনার কাতালানধর্মী।
এজেড/এইচএমএ/এটি
