হকির অধিনায়কত্বের আদ্যোপান্ত

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম কিংবদন্তি আব্দুস সাদেক। সত্তর-আশির দশকে এক সঙ্গে ফুটবল, হকি দুটোই খেলেছেন। ১৯৭২ সালে আবাহনী ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক সাদেক। বাংলাদেশ হকি অধিনায়কের তালিকাতেও তার নাম প্রথমে। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ হকি দলের আর্মব্যান্ড ছিল সাদেকের হাতেই।
স্বাধীনতার পর ’৭২ থেকেই বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন ঘরোয়া হকির কার্যক্রম চলমান রেখেছে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন আন্তর্জাতিক হকি সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছে ’৭৫ সালে। ১৯৭৭ সালে হোসেন ইমাম চৌধুরি শান্টার অধীনে মালয়েশিয়ায় জুনিয়র বিশ্বকাপ হকিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ। সে বছর বাংলাদেশ সিনিয়র দল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দু’টি প্রীতি ম্যাচ খেললেও ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমস থেকেই মূলত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের হকির প্রথম বিচরণ হিসেবে ধরছে হকি ফেডারেশন।
আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ এশিয়া কাপ এবং এশিয়ান গেমস এই দু’টি টুর্নামেন্টেই অংশ নিত। পরের এশিয়ান গেমসে আব্দুস সাদেকের উত্তরসূরি হয়েছেন আব্দুল মালেক চুন্নু। বাংলাদেশ হকি দলের অধিনায়কদের মধ্যে একমাত্র তিনিই প্রয়াত হয়েছেন। ১৯৮২ সালেই অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ছিল এহসান নাম্মীর হাতে।
সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক হকিতে তেমন অংশগ্রহণ ছিল না। ফলে ঘরোয়া হকিতে দাপিয়ে বেড়ানো প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, ইব্রাহীম সাবের, এহতেশাম সুলতান, খাজা ড্যানিয়েলের মতো কিংবদন্তীদের বাহুতে বাংলাদেশের আর্মব্যান্ড উঠেনি। বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক একাদশে জায়গা করে নেয়া জুম্মন লুসাইয়ের হাতেও উঠেনি অধিনায়কের ব্যান্ড। ১৯৮৬ সিউল এশিয়ান গেমসে জামাল হায়দারের ডেপুটি ছিলেন তিনি।
নব্বইয়ের পরবর্তী সময়টি বাংলাদেশের হকির অত্যন্ত ব্যস্ত সময়। সে ১০-১২ বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অনেক টুর্নামেন্ট, সিরিজ খেলেছে। সেই সময় একাধিকবার অধিনায়কত্ব করেছেন মাহবুব হারুন। ২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে হারুনের মতো একাধিকবার অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড রয়েছে রাসেল মাহমুদ জিমি, জাহিদ হোসেন, চয়ন, সারোয়ার হোসেনদের।
অধিনায়কত্বের তালিকায় একটি বিশেষ অবস্থানে আছেন ইসা ও মুসা। ২৭ জন অধিনায়কের তালিকায় একমাত্র তারাই দুই ভাই দেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছেন। দুই ভাইয়ের দেশের অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড বাংলাদেশে নেই। আরেকটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে আব্দুস সাদেকের। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কদের মধ্যে একমাত্র আব্দুস সাদেকেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। শামসুল বারী, মাহমুদুর রহমান মোমিন, সাজেদ আদেলরা সাবেক খেলোয়াড় হলেও তারা জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন না।
নব্বইয়ের পরবর্তী তারকা ও জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের মধ্যে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাননি রফিকুল ইসলাম কামাল। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মামুনুর রশীদ এবং অনুজদের অধিনায়কত্বে খেলে জাতীয় দলের ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে দেশের হকির অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড়ের। সাবেক এই তারকা খেলোয়াড়ের খানিকটা আফসোস রয়েছে এই আর্মব্যান্ডের প্রতি, ‘জাতীয় দলের জার্সিতে অনেক ম্যাচ খেলেছি দেশে-বিদেশে। কখনো অধিনায়কের আর্মব্যান্ড উঠেনি আমার হাতে। এটি ভাবলে একটু খারাপই লাগে। তবে আবার ভুলে যাই মানুষের ভালোবাসায়। এখনো মানুষ আমার খেলা স্মরণ করে।’ জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার যোগ্যতা-সামর্থ্য থাকলেও এই হকি তারকা অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
আশি-নব্বই দশকে ফুটবলের পরেই ছিল হকির জনপ্রিয়তা। হকি খেলোয়াড়দের ছিল অসংখ্য ভক্ত-সমর্থক। কালের বিবর্তনে হকি হারিয়েছে রং, খেলোয়াড়দের পেছনে ভিড় করেন না সমর্থকরা। হকির জৌলুস ফিরিয়ে আনতে ফ্রাঞ্চাইজি হকির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামীকাল ফ্রাঞ্চাইজ হকি উপলক্ষ্যে এক সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে হকি ফেডারেশন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত হকি ব্যক্তিত্ব, ফেডারেশনের সকল সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের অধিনায়করা:
আব্দুস সাদেক, আব্দুল মালেক চুন্নু (প্রয়াত), এহসান নাম্মী, শাহাবুদ্দিন চাকলাদার, জামাল হায়দার, ওয়ালিউল ইসলাম নাসিম, আবু জাফর তপন, মাহবুব হারুন (একাধিকবার), আ ন ম মামুন উর রশিদ, খোরশেদ আলম, এহসান রানা, রাসেল খান বাপ্পি, মুসা মিয়া, শহীদুল্লাহ টিটু, ইসা মিয়া, আশিকুজ্জামান, মাহবুব উল্লাহ চৌধুরি শাকিল, মাকসুদ আলম হাবুল, জাহিদুল ইসলাম রাজন, রাসেল মাহমুদ জিমি (একাধিকবার), মশিউর রহমান বিপ্লব (একাধিকবার), জাহিদ হোসেন (একাধিকবার), মামুনুর রহমান চয়ন, সারোয়ার হোসেন (একাধিকবার), ফরহাদ আহমেদ শিটুল, আশরাফুল ইসলাম, রেজাউল করিম বাবু ও খোরশেদুর রহমান।
এজেড/এনইউ