মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তে বিলুপ্তির শঙ্কায় লিগ চ্যাম্পিয়ন দল!

এই তো গেল মৌসুমেই চাইনিজ সুপার লিগের প্লে অফ ফাইনালে গুয়াংজু এভারগ্রান্দেকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল জিয়াংসু এফসি। সেই দলটাই এখন পড়ে গেছে অস্তিত্বের সংকটে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মালিক পক্ষ। এই ক্লাবের পেছনে আর অর্থ বিনিয়োগে আগ্রহী নয় তারা। ক্লাবটির মালিক সানিং গ্রুপের সিদ্ধান্তেই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে চাইনিজ চ্যাম্পিয়নরা।
ন্যানজিয়াং-ভিত্তিক রিটেইলার সানিং গ্রুপ, যারা সিরি’আয় ইন্টার মিলানেরও মালিক; তারা গত ফেব্রুয়ারির শুরুতেই নিজেদের মূল ব্যবসায় মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত তাদের নন-রিটেইল সম্পদগুলোকে ফেলে দিয়েছিল হুমকির মুখে, যার একটি এই জিয়াংসু এফসি। এক মাস দীর্ঘ গুঞ্জনের পর গত রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় আসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, যেখানে বলা হয়, ‘আজ থেকে ক্লাবের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে।’
জিয়াংসু ক্লাবের অফিসিয়াল উইচ্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে নতুন কোনো গ্রুপ কিংবা মালিক গোষ্ঠী যাদের ‘সুদূরপ্রসারী ভাবনা’ আছে এমন কাউকে খোঁজা হচ্ছে এখন। ক্লাবটি ভবিষ্যতে চীনের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে খেলবে কিনা তা নতুন মালিক পাওয়ায় নির্ভর করছে।
গত ২০১৫ সালে ক্লাবটির আধ বিলিয়ন ইয়েন খরচ করে ক্লাবটির মালিকানা কেনে সানিং। এরপর থেকে চীনা ফুটবলে রীতিমতো তোলপাড় ঘটিয়ে দেয় ক্লাবটি। ২০১৬ দলবদল মৌসুমে চীনা রেকর্ড ২৫ মিলিয়ন ইয়েনের বিনিময়ে চেলসি থেকে দলে ভেড়ায় রামিরেসকে। নিজেদের রেকর্ডই পরের বছর ভাঙে ক্লাবটি, রামিরেসেরই স্বদেশী ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার অ্যালেক্স টিক্সেইরাকে দলে ভেড়ায় ৫০ মিলিয়ন ইয়েনে।
দুই দলবদলের ফলও হাতেনাতেই পেয়েছিল ক্লাবটি। ২০১৬ সালে অল্পের জন্য ছোঁয়া পায়নি চাইনিজ সুপার লিগ ও চাইনিজ কাপের। পরের বছর নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পৌঁছায় এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউটে। পরের দুই বছর অবশ্য ঘরোয়া ফুটবলে ভালো করতে না পারায় টিকিটই পায়নি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের।
তবে গেল মৌসুমে সে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙে ক্লাবটি। প্রথমবারের মতো ঘরে তোলে চাইনিজ সুপার লিগ শিরোপা, যা নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্জন ক্লাবটির। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ফেরত আসে তারা। এর আগেই অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড গ্যারেথ বেলকে দলে ভেড়ানোর জন্য তোড়জোড় করেছিল জিয়াংসু। তবে শেষমেশ ওয়েলশ উইঙ্গারকে শেষমেশ দলে টানতে পারেনি ক্লাবটি। তারপরও নেহায়েত তারকাশূন্য দল ছিল না জিয়াংসু। সাবেক অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার হুয়ান মিরান্ডা সামলাচ্ছিলেন ক্লাবটির রক্ষণভাগ।
তবে ক্লাবটির দুর্দিনের আভাস মিলছিল গত মৌসুমেই। টিক্সেইরা চুক্তি নবায়ন করেননি, ফ্রি এজেন্ট হয়ে দল ছেড়েছেন গেল গ্রীষ্মে। দলকে লিগ জেতানো কোচ কসমিন ওলারিও ফেরেননি ক্লাবে, তখন থেকেই জিয়াংসুর অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের বিষয়টা কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছিল। রোববার যার চূড়ান্ত ঘোষণা এল অবশেষে।
এদিকে বেতনভাতা ঠিকঠাক পরিশোধ করতে না পারার ব্যর্থতায় চাইনিজ এফএ কাপজয়ী শ্যানডং লুনেংকে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিছুদিন আগে। এরপর লিগ চ্যাম্পিয়ন জিয়াংসুর এমন পরিণতি চীনা ফুটবলের ভবিষ্যতে আরও ধোঁয়াশা তৈরি করল বৈকি!
এনইউ/এটি