কেমন ছিল হাথুরুর প্রথম সংবাদ সম্মেলন?

'এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে' কিংবা 'এই মন তোমাকে দিলাম' এই লাইন দুটোর সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অদ্ভুদ মিল রয়েছে। ২০১৭ সালে তড়িঘড়ি করে যখন হাথুরু বাংলাদেশকে না বলে যোগ দিলেন লঙ্কান ক্রিকেটে। তখন কি ভেবেছিলেন আবারও ফিরবেন মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে।
জানা গিয়েছিল সে সময় বিসিবি থেকে হাথুরুকে মেসেজ কিংবা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো কিছুরই পাত্তা দেননি তিনি। তবে মনের মধ্যে থাকা সেই মেঘ সরে যেতে লেগেছে পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। ঐ যে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মতো 'শেষ হওয়াও হইল না শেষ'। হাথুরু ফিরেছেন পুরনো প্রেমিকের কাছে।
হাথুরুর সঙ্গে বাঁধন ছিড়েনি, রাগ করে থাকা কিংবা মন খারাপ করে থাকা প্রেয়সির মতো তাইতো ঠিক ৫ বছরের বেশি সময় পার হলেও ফিরে এসেছেন এই বাংলায়। নিয়েছেন সাকিব আল হাসানদের দায়িত্ব। গেল সোমবার রাতে ঢাকা পৌঁছে আজ বুধবারই প্রথমবারের মতো হাথুরু এসেছেন চিরচেনা মিরপুরের সেই সংবাদ সম্মেলন কক্ষে।
ঘড়ির কাটায় ঠিক দুপুর আড়াইটা চোখে সাদা চশমা, গায়ে টাইগারদের প্রাকটিস কিট চাপিয়ে এসে বসলেন মিরপুরের প্রেস কনফারেন্সের কক্ষে। ২১ মিনিট ধরে চলা সেই সংবাদ সম্মেলনে হাথুরু দিয়েছেন সব প্রশ্নের উত্তর। শুরুতেই বাংলায় নিজের ফিরে আসা সম্পর্কে বলছিলেন, 'আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে চলে যাওয়ার পর থেকেই অনুসরণ করছি। সময়ে সময়ে খেলোয়াড় ও কমকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার সবসময়ই সফট কর্নার ছিল। কারণ এটা আমার প্রথম আন্তর্জাতিক অ্যাসাইনমেন্ট। ফিরে আসার কথা সবসময়ই কাজ করতো।’
ঘরের মাঠে আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজের দল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই হাথুরুর। দলের অনেককেই চিনেন না তাইতো বললেন, 'আমি তাদের কাউকেই দেখি নাই। আমি যেটা করব, আমি দলটাকে পর্যবেক্ষণ করব। আমরা কীভাবে খেলব, সেটা ঠিক করব। তারা শেষ কিছুদিনে বেশ ভালো খেলেছে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে।'
আরও পড়ুন: মাশরাফির জাতীয় দলে ফেরা প্রসঙ্গে যা বললেন হাথুরুসিংহে
দ্বিতীয় দফায় এবার হাথুরুর অধীনে ঘরের মাঠে একটু সুবিধা নিয়ে ক্রিকেট খেলবে কি না বাংলাদেশ, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাথুরুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘ঘরের মাঠের সুবিধা বলে কি বোঝায়? যখন আমরা নিউজিল্যান্ড যাই, কি ধরনের উইকেটে খেলি? ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কি করে তাদের ঘরের মাঠে? ভারত এখন ঘরের মাঠে কি করছে?’
অন্যান্য দেশের প্রসঙ্গ টেনে হাথুরুসিংহে যোগ করেন, ‘দেশের বাইরে গেলে আমাদের যা আছে, তা দিয়েই ম্যানেজ করতে হবে। যদি মিসাইল না থাকে তাহলে তুমি কীভাবে লড়াই করবে। আমাদের তো গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে, তাই না? ওদের আমাদের ঘরে আসতে দাও, আমরা ছোট্ট ছোট্ট অস্ত্র দিয়ে লড়ব। যদি আমাদের অস্ত্র না থাকে তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারব না। আমরা শুধু খেলোয়াড়দের গড়ে তুলতে পারি।’
এছাড়া পেসার এবাদত হোসেন এবং ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে হাথুরু বলেন, 'এবাদতের কথা মনে আছে। আমার প্রথম নিউজিল্যান্ড সফরে সে ছিল ডেভেলপমেন্ট প্লেয়ার। শান্তও। এখন ওরাই ভালো করছে। সুতরাং এটা করতে সময় লাগে। সব দেশই তাই করে। আমাদের ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে হবে। আমাদের নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলতে হবে।’
সাকিব আল হাসান ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট সিরিজে খেলতে রাজি ছিলেন না। তখন দলের প্রতি সাকিবের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সাকিবকে নিয়ে করা এমন প্রশ্ন শুনে অবশ্য খানিকটা অবাক হয়ে হাথুরু জানালেন, ‘এটা তো আমার কাছে একেবারেই নতুন (খবর)। আমি তো এমন কিছু বলিনি।'
আরও পড়ুন: মিসাইল নেই, গেরিলা যুদ্ধের ডাক হাথুরুসিংহের
গেলবার শোনা গিয়েছিল সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাথুরুর সমস্যার কথা। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রথমেই বললেন, 'সত্যি বলতে বাংলাদেশের সঙ্গে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমি খুব উপভোগ করেছি। তবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি রাবিশ। এর কোনো ভিত্তি নেই।'
তবে বর্তমান সময়ে জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটার যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখাটা চ্যালেঞ্জ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাথুরু বলেন, ‘নাহ, একদমই না। আমি ইতোমধ্যেই সব সিনিয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয় সবার ফোকাস একটা ব্যাপারেই, দল এক নম্বরে রাখা। সবাই চায় দল ভালো করুক। এমনকি শেষবারও কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না আমার। চ্যালেঞ্জ ছিল দলের সবার নজর দল ভালো করায় রাখা। তো আমার মনে হয় না এটা চ্যালেঞ্জ হবে।’
হাথুরুর কাছে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জাতীয় দলে ফেরা প্রসঙ্গেও। তখন হাথুরু বলেন, 'নির্বাচনের জন্য (দলে)’? উল্টো সাংবাদিককে ছুড়লেন প্রশ্ন, ‘তাকে নিয়ে চিন্তাভাবনাটা কি নির্বাচনের জন্য কি না?’ এরপর কিছুটা থেমে হাথুরুসিংহ স্পষ্ট করে বললেন, ‘আমি মনে করি সে আর খেলবে না।'
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ড সিরিজে দল পর্যবেক্ষণ করবেন হাথুরু
২০১৪ সালে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হয়ে যখন হাথুরুসিংহে ঢাকায় এসেছিলেন তখন তার বয়স ছিল ৪৬ বছর। তবে ৮ বছর বাদে আবার যখন আসলেন তখন তার বয়স ৫৪, চুল দাড়িতেও দেখা গিয়েছে সে ছাপ। এই কারণেই কি এবার আরো পরিণত হাথুরু। সেবার নানা ধরণের গুঞ্জন ছিল সাবেক এই লঙ্কানকে নিয়ে। এবারো কি আগের মতো থাকবেন হাথুরু, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের উত্তরে সাকিবদের ওস্তাদ বললেন, ‘আগের চেয়ে কিছুটা বয়স বেড়েছে। তাই কিছুটা আলাদা হয়তো হবো।’
এসএইচ/এফআই
