শাহিনকে নিয়ে মিরাজ-ইমরুলের ‘স্বপ্নের কারখানা’
অসুস্থ হলে যেমন রোগীরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, তেমনি ক্রিকেটারদের ব্যাটে সমস্যা হলে ছুটতে হয় ব্যাটের কারিগরের কাছে। সেই 'ব্যাট ডাক্তারদেরই' একজন হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব। তবে ক্রিকেট পাড়ায় তার পরিচিতি ‘শাহিন’ নামেই। লম্বা সময় ধরে এই পেশায় যুক্ত থাকা রাজশাহীর শাহিন এবার নিয়েছেন নতুন এক উদ্যোগ। যেখানে তিনি পাশে পাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং ইমরুল কায়েসকে।
জাতীয় দলের এই দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে ব্যাট তৈরীর প্রতিষ্ঠান গড়তে যাচ্ছেন শাহিন। এবারই প্রথমবার বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, যার নাম রাখা হয়েছে 'এমকেএস স্পোর্টস'। চলতি মাসেই এই প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
ব্যাট তৈরীর এই কারখানা প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প ঢাকা পোস্টের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন শাহিন। পাঠকের উদ্দেশে সেই আলোচনার চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলঃ
ব্যাট তৈরীর কারখানা গড়ার ভাবনাটা কোথায় থেকে এসেছে?
শাহীন: ২০১৩ সাল থেকে ইমরুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। তখন থেকেই তার ব্যাট আমি মডিফিকেশন করি, সেখান থেকেই আস্তে আস্তে...অনেক আগে থেকেই আমার শখ ছিল যে, আমি বাংলাদেশে একটি ব্যাট ফ্যাক্টরি দেবো। এই মডিফিকেশনে কাজ করছি মোটামোটি ২২ বছর। ইচ্ছা ছিল তবে আর্থিক অবস্থা তেমন ছিল না। কেননা বাইরে থেকে সবকিছু আনা অনেক টাকার ব্যাপার। আমি চাচ্ছিলাম এরকম একটা সাপোর্টের, ইমরুল ভাই অনেকদিন ধরেই আমাকে বলছিলেন, 'শাহীন ভাই করবেন কি না? পার্টনার হবো আপনার।' আরো অনেক খেলোয়াড়ই প্রোপোজাল দিয়েছিল, আমার পার্টনার হওয়ার জন্য। ৬/৭ বার বলার পর আমি রাজি হই যে, ইমরুল ভাইয়ের সঙ্গে চালিয়ে যাব।
জাতীয় দলের এই দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে ব্যাট তৈরীর প্রতিষ্ঠান গড়তে যাচ্ছেন শাহিন। এবারই প্রথমবার বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, যার নাম রাখা হয়েছে 'এমকেএস স্পোর্টস'। চলতি মাসেই এই প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
মিরাজ যুক্ত হলো কিভাবে?
শাহীন: ইমরুল ভাইয়ের থেকে জানার পর মিরাজ আমাকে কল দিয়েছিল। সেও পার্টনার হতে চায়, আমি বলেছিলাম যে, 'পরে জানাব আমি।' পরবর্তীতে ইমরুল ভাইয়ের মাধ্যমে তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কারখানা তৈরীর সিদ্ধান্তটা কখন নিলেন?
শাহীন: আসলে ২০২০ থেকে টার্গেট ছিল আমি ফ্যাক্টরি করব। তখন থেকেই এসব কাজ করি, ইংল্যান্ড থেকে টুকটাক ব্যাট নিয়ে আসি। যে সকল খেলোয়াড়দের চাওয়া থাকে সেসব বানাতে থাকি ধীরে-সুস্থে।
আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানা কবে ও কোথায় শুরু করবেন?
শাহীন: যেহেতু আমার বাসা রাজশাহীতে, সে কারণে মূল ফ্যাক্টরি হবে রাজশাহীতে। ঢাকায় শিফট করব না। মিরাজ ভাই বলেছিল, ঢাকায় করার জন্য পরে ইমরুল ভাই বলল, 'ঢাকা আসতে হবে না, শাহীন ভাই রাজশাহীতেই করেন।' এটার যাত্রা শুরু হবে ঈদের পর থেকেই। লোগোসহ অন্যান্য সবকিছু হয়ে গিয়েছে। ফ্যাক্টরির নাম 'এমকেএস'।
কারখানার নাম 'এমকেএস' এটার রহস্য কি?
শাহীন: আসলে এটার একটা মজার কারণ রয়েছে। আমাদের তিন জনের ডাক নামের প্রথম অক্ষর থেকে তিনটি অক্ষর নিয়েছি। এটা সম্পূর্ণ আমিই করেছি। এমনকি ব্যবসার জন্য যত যাই সবকিছু আমিই ডিল করতেছি। ওনারা শুধু ইনভেস্ট করছে আর ব্র্যান্ডিং। বাকি সবকিছু মেনুফ্যাকচারিং যা ওগুলো আমিই করছি।
এখনও পর্যন্ত জাতীয় দলের কতজন ক্রিকেটারের ব্যাট আপনি তৈরী করেছেন?
শাহীন: ইমরুল ভাই আমার ব্যাট দিয়ে খেলতেছে। আফিফ, শান্ত খেলছে অনেক আগে থেকে। মুশফিক ভাই আছে, ফরহাদ রেজা, মোসাদ্দেক, নাইম শেখ, সাইফউদ্দিন, রিয়াদ ভাই, লিটন, সোহান।
কখনো কাউকে ব্যাট উপহার দিয়েছেন?
শাহীন: স্পেশালি কিছুদিন আগে আমি মুমিনুলকে ব্যাট উপহার দিয়েছি। আমার কাছের একজন ব্যক্তি সে। আমি পছন্দ করি ওনাকে, আমি কিছুদিন আগেই ব্যাট দিয়েছিলাম যখন ওনি রাজশাহী এসেছিলেন খেলতে। ওই ব্যাট নেওয়ার পরদিনই এনসিএলে ওনি ১৪২ রান করেন। আমি চাই সবাই খেলুক আমার ব্যাট দিয়ে, বাংলাদেশি ব্রান্ড। সবাই ব্যবহার করুক মেইড ইন বাংলাদেশ। আমি চাই সাকিব ভাই থেকে শুরু করে সবাই খেলুক।
বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে আপনার পরিচয় কিভাবে?
শাহীন: বাইরে থেকে যখন কোনো ক্রিকেটার খেলতে আসে ওনাদের ব্যাটের কোনো সমস্যা হলে আমার কাছেই আসে, রেফার করা হয় জাতীয় দল থেকে। বিদেশিদের সমস্যা হলে আমার কাছে বলা হয় যে, আমি করব কি না। সিকান্দার রাজার সাথে অনেক আগে থেকেই পরিচয় আমার। এবারের বিপিএলের আগে ইমরুল ভাইয়ের জন্য স্পেশাল একটা ব্যাট তৈরী করেছিলাম। তখন কুমিল্লা দলের সবাই পছন্দ করে ওই ব্যাটটি দেখে। তখন খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ নবী, রাসেল, নারিন সবারই পছন্দ হয়েছিল সেই ব্যাট। তখন রাসেল চেয়েছিল তবে আমার কাছে তখন ওই সময়ে উইলো ছিল না। তাই বানিয়ে দিতে পারিনি।
বাংলাদেশে এমন কারখানা এই প্রথম, চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন কতটা আশাবাদী?
শাহীন: আমার দিক থেকে বলব ইন-শা-আল্লাহ, আমি এগিয়ে যাব। কারণ এটা আল্লাহর হাতে কতদূর যেতে পারব। কারণ বাংলাদেশে পুরোটাই নির্ভর করে কিন্তু ভারতের ওপর। কিন্তু সেখান থেকে কম দামে ওমন ভালো ব্যাট তারা পায় না। ব্যাটের অনেক দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আমি চাই কম দামে অনেক ভালো ব্যাট দিব। মন মতো দিব, কেননা খেলোয়াড়ের ব্যাট মন মত না হলে কিন্তু সে খেলতে পারে না।
এসএইচ/এইচজেএস /এফআই