দুই ‘অধিনায়কের’ সঙ্গে কিছুক্ষণ

একজন বর্তমান অধিনায়ক। আরেকজন সাবেক অধিনায়ক। ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপে অধিনায়কত্ব করা কাজী সালাউদ্দিন যখন (১৯৮৪) বুট তুলে রেখেছিলেন তখন পৃথিবীর আলোও দেখেননি বর্তমান অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। বর্তমান প্রজন্মের কাছে কাজী সালাউদ্দিনের পরিচয় প্রায় পুরোটাই বাফুফে সভাপতি হিসেবে। বাফুফে সভাপতি হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতায়, ব্যর্থতায় সালাউদ্দিন সমালোচিত হলেও অনেকের হৃদয়ে এখনো যেন সেই ফুটবলার সালাউদ্দিন। যারা তার খেলা দেখেননি এদের কাছে সালাউদ্দিন যেন একটা রুপকথার চরিত্র বা মিথ!
দুই অধিনায়ক গতকাল একই ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু এসেছেন। দুই জনই বিমানবন্দরে সাধারণ গেট ব্যবহার করেছেন। করোনা কালীন সময়ে বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা একটু বেশি। ইমিগ্রেশন, বোর্ডিংয়ে একটু বেশি সময় লাগছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায়। কাজী সালাউদ্দিন ইমিগ্রেশনের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন সবার সাথে একই লাইনে। পেছন থেকে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার দাড়িয়ে সালাউদ্দিনকে চিনতে পেরে ইমিগ্রেশনের সামনে নিয়ে গেলেন। ইমিগ্রেশন অফিসারও যেন সালাউদ্দিনের পাসপোর্টে সিল দিতে পেরে খানিকটা তৃপ্ত।
সাবেক অধিনায়ক এমন কদর পেলেও বর্তমান অধিনায়কও পেয়েছেন অন্য রকম ভালোবাসা। জামাল সাধারণ জীবনে ক্যাপ, চশমা পড়েন। কালও একই ভাবে ছিলেন। এর মধ্যেও যারা চিনতে পেরেছেন তারা বর্তমান অধিনায়কের সঙ্গে সেলফি বা নিজেকে ফ্রেমবন্দী করার চেষ্টা করেছেন। অনেকে জামালকে চিনতে পেরেও করোনা সতর্কতার জন্য কাছাকাছি যাননি। বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টার বয় হলেও জামালকে নিয়ে সেই অর্থে উন্মাদনা দেখা যায়নি।
ইমিগ্রেশন শেষে বিমানে উঠার জন্য ওয়েটিং রুমে দুই অধিনায়ক এক সঙ্গে বসলেন কিছুক্ষণ। কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি থেকে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে গেলেন নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে। জামালকে বলছিলেন হংকংয়ে ক্যারোনো হিল ক্লাবে খেলার গল্প। পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন জামালের কলকাতা থেকে খেলে আসা তরতাজা গল্প। এই দুই অধিনায়কের খোশ গল্প বোঝার চেষ্টা করছিলেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর ইংলিশ ম্যান পল স্মলি।
একই ফ্লাইটে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা থাকায় তারাও উপভোগ করছিলেন বর্তমান ও সাবেক অধিনায়কের আলাপচারিতা।
গল্পে গল্পে ত্রিশ মিনিটের বেশি পেরিয়ে যাচ্ছে। ক্লান্তি নেই দু’জনের। ভিভিআইপি মুভমেন্ট হওয়া ফ্লাইট খানিকটা বিলম্ব। বোর্ডিংয়ের দায়িত্বে থাকা অফিসার আসলেন সালাউদ্দিনের কাছে। বিশেষ গাড়ি দিয়ে তাকে বিমানে উঠে বসার ব্যবস্থার কথা জানালেন। প্রথমে সালাউদ্দিন রাজি হননি পরে বর্তমান অধিনায়ক ও সঙ্গে থাকা বাফুফের কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বিমানের দায়িত্বরত অফিসার সেই মোতাবেকই ব্যবস্থা করেন।
সাবেক অধিনায়ক বিজনেস ক্লাসে আর বর্তমান অধিনায়ক ছিলেন ইকোনোমি ক্লাসে। বিজনেস ক্লাসের ডান দিকের প্রথম সিটে থাকায় সকল যাত্রীকে সাবেক অধিনায়ককে অতিক্রম করেই নিজ নিজ আসনে যেতে হয়েছে। ব্যস্ততায় ছবি তুলতে না পারলেও কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে ছিলেন অনেকেই। ইকোনোমি ক্লাসে থাকায় বর্তমান অধিনায়কের সাথে সময়-সুযোগ করে ছবি তুলে গেছেন অনেকেই।
একই ফ্লাইটে সাংবাদিক থাকায় বিমানেও ছোটখাটো দিতে হয়েছে জামালকে। বর্তমান অধিনায়ক এটা অবশ্য উপভোগই করেছেন। সোয়া এক ঘন্টার ফ্লাইট শেষে বিমান ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সাধারণের সাথে লাইন ধরে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারেন দুই অধিনায়ক। কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে বর্তমান অধিনায়ক ও এই প্রতিবেদক ছিলেন নিকট দূরত্বে। ইমিগ্রেশন অফিসার অধিনায়ককে চেহারায় চিনতে পারেননি। পাসপোর্টে নাম দেখে আঁচ করেছেন। বাংলাদেশ দলের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে জামালের ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন অফিসার।
ইমিগ্রেশন,কাস্টমস শেষে লাগেজ বুঝে নিয়ে দুই অধিনায়ক দুই গন্তব্যে। বর্তমান অধিনায়ক যাবেন টিম হোটেলে সাবেক অধিনায়ক যাবেন অন্য হোটেলে। সাবেক অধিনায়ক বর্তমানকে শুভ কামনা জানিয়ে বিদায় নেন বিমানবন্দর থেকে। বর্তমান অধিনায়ক অগ্রজ অধিনায়ক ও বর্তমান অভিভাবকের কাছে দোয়া চেয়ে দেশের দায়িত্ব পালনের পথে পা বাড়ান।
এজেড/এনইউ/এটি
