দলের বাজেট জামালদের বেতনের সমান, তবুও মাঠে নেপালের ফ্র্যাঞ্চাইজি

নেপালীরা ফুটবলপাগল জাতি। কাঠমান্ডুর অলিতে-গলিতে এখন আলোচনা নেপাল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। কে জিতবে অভিষেক আসর? কাঠমান্ডু সিটি না ধনগড় এফসি নাকি পোখরা সিটি? এ নিয়ে চলছে হিসেব নিকেশ। সাত দলের ফ্রাঞ্চাইজ লিগ শুরু হচ্ছে ২৪ এপ্রিল থেকে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতেই প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক লিগ শুরু হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু হওয়ার পর এখন আইএসএল জায়গা নিয়েছে আই লিগের। আইএসএল ভারতের শীর্ষ লীগ, আগের আই লিগ এখন দ্বিতীয় স্তরের। নেপালও হয়তো সামনে এই পথে হাঁটবে।
নেপাল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটা ভারতের ক্রিকেট আইপিএলের অনুসরণে করা। এবার সাত ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথম পর্বে প্রত্যেকে ছয়টি ম্যাচ খেলবে। শীর্ষ চার দল খেলবে প্লে অফ। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা দুই দল খেলবে প্রথম প্লে অফ। বিজয়ী দল সরাসরি যাবে ফাইনালে বিজিত দল আরেকবার খেলার সুযোগ পাবে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানের মধ্যকার বিজয়ী দলের সঙ্গে।
খেলার ফরম্যাটের মতো আইপিএলের দলগুলো যেমন রাজ্য/এলাকার নামে নেপাল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও তেমনি। সাত ফ্র্যাঞ্চাইজি নেপালের সাত শহরের নামে। সাত শহরের নামে হলেও প্রথম আসরের সব ম্যাচ দশরথ স্টেডিয়ামে ও সাত দলই ক্যাম্প করবে কাঠমান্ডুতে।
অল নেপাল ফুটবল এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিভাগের কর্তা আয়ুশ খাড়কা এনএফএলের বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে বলেন, ‘নেপালের ফুটবলের বৈচিত্র্য আনতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। একটি স্পোর্টস ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টেই করছে মূলত এই আয়োজন। আনফা ট্যাকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে। এভাবে কয়েক বছর চললে এরপর হয়তো নেপালের ফুটবল কাঠামোর স্তরে স্বীকৃতি আসতে পারে।’
ইতোমধ্যে সাত ফ্র্যাঞ্চাইজি স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিলাম সম্পন্ন করেছে। এখন সন্ধান করছে বিদেশি ফুটবলারদের। একটি দলে তিন জন বিদেশি রেজিস্ট্রেশন ও তিন জনই খেলাতে পারবে। নেপাল প্রিমিয়ার লিগের সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ফুটবলারদের পারিশ্রমিকের তুলনা করতে গিয়ে ধনগড় এফসি’র টিম ম্যানেজার দিপেশ তিমালসিনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই টিম গড়েছি। পারিশ্রমিকের বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। জাতীয় দলে খেলা ফুটবলাররা গড়ে দুই লাখ রুপির উপরে পারিশ্রমিক পাচ্ছে।’ এক মাসের এই প্রতিযোগিতায় দুই লাখ রুপি পারিশ্রমিক। নেপালের শীর্ষ লিগেও পারিশ্রমিক থাকে এর কাছাকাছিই।
নেপালী ফুটবলার যারা ভারতে আই লিগ ও ইন্দোনেশিয়া লিগে খেলছে তারা আইকনিক ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত। প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজি একজন আইকন নিতে পারবেন। আইকনের কোনো ভিত্তিমূল্য নেই। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ফুটবলারের সাথে আলোচনা করে করবে।
নেপালী ফুটবলাররা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেললেও বাংলাদেশিরা সেভাবে নেপালের লিগে খেলেনি। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও সেই অর্থে বাংলাদেশিদের খেলার সম্ভাবনা দেখছেন না দিপেশ, ‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে তপু বর্মণ, জামাল, বিশ্বনাথ ঘোষ এদের দলে নিতে চাই। কিন্তু এরা বাংলাদেশে অনেক পারিশ্রমিক পায়। ফলে নেয়া সম্ভব নয়। এছাড়া আরেকটি বিষয় তারা সবাই ক্লাবে চুক্তিবদ্ধ। সামনের লিগের দ্বিতীয় লেগ রয়েছে।’
ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মানেই যেন খানিকটা বিতর্ক। নেপাল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মাঠে গড়ানোর আগেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। নেপাল জাতীয় ফুটবল দলের কোচ বালগোপাল মহারজন কাঠমান্ডু সিটির কোচের দায়িত্বে রয়েছেন। জাতীয় দলের কোচ ফ্রাঞ্চাইজ দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। ক্লাব, আনফার কর্তাদের এই লিগে সম্পৃক্ততার মাত্রা নিয়েও রয়েছে খানিকটা কানাঘুষা।
এক ভেন্যুতেই খেলবে সাত দল। টিকিট ও টিভি স্বত্ব বিক্রির কত শতাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজি পাবে, এর মধ্যে আনফার অংশ থাকবে কিনা এ সব জটিল বিষয় এখনো সমাধান হয়নি। এরপরও নেপালীরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে বুদ হয়ে আছে। সেখানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাংলাদেশ সুপার লিগের লোগো উন্মোচন, প্রমো করেও ফ্রাঞ্চাইজ লিগ মাঠে গড়াতে পারেনি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে মাত্র এক থেকে দেড় লাখ ডলার বাজেট অধিকাংশ দলের। সেখানে বাংলাদেশে জামাল-ইমন বাবুদেরও পারিশ্রমিকই এক ফ্র্যাঞ্চাইজি মোট বাজেটের কাছাকাছি। সম্ভাবনা,সামর্থ্য থাকা সত্বেও বাংলাদেশে আলোর মুখ দেখছে না ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
এজেড/এনইউ
