তদন্তের মধ্যেই ২ পদত্যাগপত্রে নানা প্রশ্ন

গত কয়েক মাস ধরে নানা ইস্যুতে সমালোচনায় বিদ্ধ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগের উপর ফিফার নিষেধাজ্ঞার পর বাফুফে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই তদন্ত কমিটির নজরদারিতে ছিলেন আবু হোসেন (প্রধান অর্থ কর্মকর্তা) এবং মিজান (অপারেশন্স ম্যানেজার)। তদন্ত অবস্থায় এই দুইজন পদত্যাগ করায় আবার আলোচনায় এসেছে ফুটবল ফেডারেশন।
২০০৮ সালে কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার কিছু সময় পরেই আবু হোসেন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময় বাফুফের আর্থিক বিষয় দেখভাল করেছেন। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আস্থাভাজনও তিনি। তদন্ত চলাবস্থায় আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করার কারণ সম্পর্কে আবু হোসেন বলেন, 'আমার শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে (কোলন ক্যান্সারের উপক্রম) দুই মাসের বেশি ছুটি প্রয়োজন। ফেডারেশনের কর্ম ব্যস্ততা অত্যধিক তাই এত বেশি ছুটি পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় তাই দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই।’
বিগত দুই বছর চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে অনেক সময় কাটিয়েছেন। নির্ধারিত ছুটির বাইরেও অনেক দিন অনুপস্থিত ছিলেন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা। আবুর অতিরিক্ত ছুটি কাটানোয় বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। বাফুফে সভাপতিকে পুনরায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার পরিবর্তে নিজেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন!
বাফুফে গত কয়েক বছর ধরেই আর্থিক বিষয়ে খবরের শিরোনামে। এ নিয়ে বাফুফে তদন্তও করছে। তদন্ত কমিটির আগাম রিপোর্টের ভয়ে আগে-ভাগে সরে যাওয়া নাকি সরিয়ে দেয়া হয়েছে আবু ও মিজানকে এ নিয়ে আলোচনা চলছে খোদ ফেডারেশনেই। এই প্রসঙ্গে আবুর বক্তব্য, '৩০ জুন পর্যন্ত আমি রয়েছি। আমি পদত্যাগ পত্র দিলেও এখনো রিলিজ লেটার পাইনি। তদন্ত কমিটির কাজে আমি শতভাগ সহায়তা করছি। তারা যা চাইছে সব কিছুই সরবারহ করছি। দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও কোনো কাজে আমাকে ডাকলে সময় দেব।’
বাফুফে আবু হোসেন ও মিজানের পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ না করলেও ইতোমধ্যে এই দু’জনের স্থলাষিভিক্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। যা অনেকটা গ্রহণের শামিলই। তাদের দুই জনের আকস্মিক পদত্যাগ এবং বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির অনেকেরই অজানা। নির্বাহী কমিটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, 'সোহাগের সময় তারা দুই জনই ফেডারেশন পরিচালনা (প্রশাসনিক) করতেন। সোহাগের নিষেধাজ্ঞার পর তদন্ত চলছে তখনই কেন পদত্যাগ করল বিষয়টি খতিয়ে দেখার মতো। তা না করে তাদের বিকল্প চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত কে বা কারা নিল তা অনেকেরই অজানা।'
আজ বিকেলে তদন্ত কমিটির আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির আহ্ববায়ক কাজী নাবিল আহমেদ সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। ঘন্টা খানেকের একটু বেশি সময় অনুষ্ঠিত হওয়া এই সভা শেষে কমিটির অন্যতম সদস্য এবং মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরিকে দুই পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে, ‘আমরা এই বিষয়টি শুনেছি তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিনি। আজও আবু সাহেব আমাদের কমিটির সামনে উপস্থিত হয়েছিল। আমাদের কমিটির কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতেই চলছে।'
তদন্ত কমিটির মেয়াদ ছিল প্রথম সভা থেকে ৩০ কর্ম দিবস। ১৩ জুনের সভার পর কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়ে আরো ১৫ কর্ম দিবস হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ শেষে রিপোর্ট কাটা-ছেড়ার চলছে বলে জানা গেছে।
এজেড/এইচজেএস