কারানের অবিশ্বাস্য লড়াই বিফলে, সিরিজ ভারতের

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৮.২ ওভারে ৩২৯ (রোহিত ৩৭, ধাওয়ান ৬৭, পান্ত ৭৮, হার্দিক ৬৪, ক্রুনাল ২৫, শার্দুল ৩০; কারান ৪৩-১, উড ৩৪-৩, রশিদ ৮১-২, মইন ৩৯-১, লিভিংস্টোন ২০-১)।
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২২/৯ (স্টোকস ৩৫, মালান ৫০, লিভিংস্টোন ৩৬, মইন ২৯, কারান ৯৫*, উড ১৪ ; ভুবনেশ্বর ৪২-৩, নটরাজন ৭৩-১, শার্দুল ৬৭-৪)।
ফলাফল: ভারত ৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত।
ম্যাচসেরা: স্যাম কারান।
সিরিজসেরা: জনি বেয়ারস্টো।
রান আউট হয়েছেন কি না, তখনো নিশ্চিত নন মার্ক উড। তবুও দুই পাশে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বসে পড়েছেন স্যাম কারান ও তিনি। দুই চোখে তখন তাদের ‘এত কাছে তবুও কত দূরে’ চাপা আর্তনাদ। অবিশ্বাস্য এক লড়াই শেষে এসে থামল রান আউট হতাশায়। নিয়তি লিখে রেখেছিল এমনই।
২০০ রানেই ইংল্যান্ডের নেই সাত উইকেট। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আদিল রশিদ ফিরে যাচ্ছেন, তখন স্কোরকার্ডে জমা হয়েছে ২৫৭ রান। ম্যাচ জিততে তখনো ইংলিশদের দরকার ৭৩ রান। ওই ম্যাচকেই ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন মার্ক উড ও স্যাম কারান। ভারতীয় ফিল্ডারদের হাত ফসকে পড়ে যাওয়া একের পর এক ক্যাচের সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছিলেন তারা।
স্যাম কারান লক্ষ্যটা মনে রেখে খেলে যাচ্ছিলেন নিজের মতো। উড তাকে দিয়ে যাচ্ছিলেন যোগ্য সঙ্গ। কিন্তু শেষ ওভারে যখন রান দরকার ১৪। তখন প্রথম বলেই দুই রান নিতে গিয়েছিলেন উড ও কারান। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার ডিরেক্ট থ্রো গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে, ভাঙে ৬০ রানের অবিশ্বাস্য জুটি।
আদতে পরাজয়টা শুধু সে ওভারের জন্যই হয়নি ইংল্যান্ডের। ৪৭তম ওভারে কারান দুই চার আর এক ছক্কায় শার্দুল ঠাকুর থেকে আদায় করে নিয়েছিলেন ১৮ রান। জয়ের জন্য পরের তিন ওভারে ইংল্যান্ডের চাই ২৩ রান, টি-টোয়েন্টির যুগে ১৮ বল থেকে এ রান খুব কি বেশি কিছু? হ্যাঁ, বেশি কিছুই! অন্তত ভুবনেশ্বর কুমার আর হার্দিক পান্ডিয়ারা মনে করালেন তেমন কিছুই। পরের দুই ওভারে দুজনে দিলেন মোটে ৯ রান। নটরাজনের শেষ ওভারে তাতে সফরকারীদের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান।
প্রথম বলে দুই রান চুরি করতে গিয়ে উডকে হারান কারান। এরপর নতুন সঙ্গী রিস টপলে থেকে স্ট্রাইকটা ফিরে পেলেন অবশ্য ইংলিশ অলরাউন্ডার। পরের বলটা নটরাজন করলেন একেবারে ওয়াইড লাইন ঘেঁষে, ব্যাটে বলে হলো না। এরপরের বলে ব্যাট ছোঁয়ালেন, তবে বলটা গেল লং অফ অঞ্চলে, রান নিলেন না কারান। পরের বলটায় ব্যাট ছোঁয়ালেন, হলো চার, কিন্তু তখন ছয় ছাড়া আর কোনো কিছুতে আপাতদৃষ্টিতে তেমন লাভ হতো না ইংলিশদের, যদি না শেষ বলে নাটকীয় কিছু হয়ে যেত। শেষ বলে তা হলোও না, নটরাজনের বৈধ বলটা উড়িয়ে মারলেন কারান, তা গিয়ে পড়ল সেই লং অনে, ম্যাচের সঙ্গে সিরিজ হার ততক্ষণে নিশ্চিত ইংলিশদের। আর কারানের চোখে-মুখে তখন তীব্র হতাশা। অতদূর টেনে নিয়ে এসেছেন দলকে, তাও পুড়লেন হারের যন্ত্রণায়, হতাশ তো হওয়ারই কথা!
কারানের মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিলেন টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা, ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়ে। নাহয় ইংল্যান্ড যে 'ভয়ডরহীন' আর প্রতিপক্ষের মগজে ত্রাস সৃষ্টি করা ক্রিকেট খেলে চলেছে শেষ কয়েক বছরে, তাতে তো ৩৩০ রানের লক্ষ্যটা মামুলিই হওয়ার কথা!
বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই দিশেহারা ছিল ইংল্যান্ড। দলীয় ১৪ রানে ব্যক্তিগত ৬ বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান ওপেনার জেসন রয়। আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টোও আউট হন ৪ বলে ১ রান করে।
এরপর ইংল্যান্ডের ইনিংসের হাল ধরেন বেন স্টোকস ও ডেভিড মালান। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ বলে ৩৫ রান করে আউট হন স্টোকস। ছয় চারে ৫০ বলে ঠিক ৫০ রান করে সাজঘরে ফেরেন মালানও। এই দুইজনের বিদায়ের পর দ্রুতই আরও উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।
সফরকারীদের জয়ের আশা যখন ক্ষীণ হয়ে আসে, তখনই হাল ধরেন উড ও কারান। যদিও শেষ পর্যন্ত আর জেতাতে পারেননি তারা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩২২ রানে থামে ইংল্যান্ড।
এর আগে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় ভারত। উদ্বোধনী জুটিতে ১০৩ রান যোগ করেন শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। ৬ চারে ৩৭ বলে ৩৭ রান করে আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়ে রোহিত ফেরত গেলে এই জুটি ভাঙে। এরপর অধিনায়ক বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান ও লোকেশ রাহুলের দ্রুত বিদায়ে বিপদেই পড়ে যায় ভারত।
তবে ঋষভ পান্ত ও হার্দিক পান্ডিয়ার কল্যাণে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার শঙ্কা থেকে মুক্তি পায় স্বাগতিকরা। দুজনের প্রায় সেঞ্চুরি ছোঁয়া জুটি ভাঙে পান্তের বিদায়ে। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ বলে ৭৮ রান করে স্যাম কারানের বলে আউট হন পান্ত। এর কিছু পরেই বিদায় নেন হার্দিক পান্ডিয়াও, ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৪ বলে ৬৪ রান করে আউট হন তিনি। এরপর ক্রুনাল পান্ডিয়ার দৃঢ়তা আর শার্দুল ঠাকুরের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৩৮ রানের বড় পুঁজি পায় ভারত।
এরপর কারান বীরত্বের পরও ৭ রানের হার। তাতে সিরিজটাই ২-১ ব্যবধানে হারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
এনইউ/এমএইচ