এ কেমন বাংলাদেশ!

এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স দেখেছিল কে কবে? স্মৃতির দুয়ার হাতড়ে মনে করা কঠিন। কেবল কঠিন বললেও বোধ হয় পুরোপুরি বোঝানো যায় না। বলা উচিত ‘খুব খুব কঠিন’। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করেছেন এমন যেন কোনো উদ্দেশ্য নেই, লক্ষ্য ছোঁয়ার তাড়না নেই, এমনকি নেই ন্যূনতম লড়াইয়ের চেষ্টাও!
কীভাবে কী করতে হবে, সবাই যেন ভুলে গেছেন। সবাই কি মনে করছেন উইকেটে আসা-যাওয়াটাই তাদের দায়িত্ব? ভালো বলতে পারবেন ব্যাটসম্যানরাই। তারা কেন নামছেন, কেন আউট হয়ে নির্লিপ্তভাবে হেঁটে যাচ্ছেন ড্রেসিং রুমের দিকে- দূর থেকে টিভির দিকে ‘হা’ হয়ে তাকিয়ে থেকেও বোঝা গেল না কিছুই।
কেবল ব্যাটসম্যানদের বললে বোধ হয় ব্যাপারটা ‘বায়াসড’ হয়ে যায়। বোলারদের যেভাবে ছাতুপেটা করলেন কিউইরা তাতে তাদের দায় কি কম? হোক দশ ওভারের ম্যাচ, ব্যাটসম্যানদের কোয়ালিটি যতই থাক, কন্ডিশনের দায় যতই দিই, ৬০ বলের মধ্যে ২২টাতেই যে বাউন্ডারি খেয়েছেন তারা। ১০ ওভারে দিয়েছেন ১৪১ রান!
এতে অবশ্য আবার পুরো দায় তাদের দেওয়ার সুযোগও নেই। ফিল্ডারদের হাত যে পুরো সিরিজ জুড়েই ‘পিচ্ছিল’। আজও যে কয়টা ক্যাচ উঠল, তার বেশিরভাগই ধরা হয়নি। অথচ তরুণদের জন্য কতই না দারুণ এক মঞ্চ ছিল। এক দশকের বেশি সময় পর ‘পঞ্চপান্ডবহীন’ একাদশ। নিজেদের মেলে ধরার দারুণ সুযোগ। তারা তো সেটা কাজে লাগাতে পারলেনই না, উল্টো দশ ওভারের ম্যাচ হারলেন ৬৫ রানে।
নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ইনজুরির খবর গত রাত থেকেই ভেসে বেড়াচ্ছিল, সকালে অফিশিয়ালি জানা গেল তার অনুপুস্থিতিতে অধিনায়ক হচ্ছেন লিটন কুমার দাস। এই দায়িত্বে ১৮তম ক্রিকেটার তিনি দেশে। ভাগ্য তার সহায়ই হয়েছিল। টসে জিতে বোলিং নিলেন।
সেটাই যেন কাল হলো। গাপটিল আর ফিন অ্যালেন মিলে এমনভাবে চার ছক্কা মারতে থাকলেন, বাংলাদেশের বোলারদের অবস্থা এমন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’। সেই ছেড়ে দেয়াটা অবশ্য কয়েকবারই দিতে চেয়েছিলেন ফিন অ্যালেন, কিন্তু বাংলাদেশের ফিল্ডাররা তাতে রাজি হলে তো! ক্যাচ ছেড়ে তাদের যেন বললেন ‘আরেকটু থাক, রান কর’।
তারা সেটা করলেন ভালোভাবেই। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে যখন উদ্বোধনী জুটি ভাঙছে, তখন স্কোরকার্ডে জমা হয়েছে ৮৫ রান। ১৯ বলে ৪৪ রান করা মার্টিন গাপটিলকে আউট করেন মেহেদী হাসান। এরপর ছয় বলে ১৪ রান করা গ্লেন ফিলিপসকে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
তবে থামানো যায়নি অ্যালেন ঝড়। ইনিংস শেষের দুই বল আগে তিনি যখন সাজঘরে ফেরত যান, তখন তার নামের পাশে ১০ চার আর ৩ ছক্কায় ২৯ বলে ৭১ রান। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসটাও বিশাল হওয়ার পথে। সেটা শেষ পর্যন্ত থেমেছে ১৪১ রানে।
বিশাল লক্ষ্য, দেখেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ‘ভ্যাবাচ্যাকা’ খেয়েছিলেন কি না কে জানে। শুরুটা অবশ্য ভালোই করেছিলেন সৌম্য সরকার। প্রথম তিন বলের দুটিতে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তুলে ফেলেছিলেন ১০ রান। কিন্তু সাউদি এমন দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরলেন পরের বলেই, সৌম্যর হতভম্ব হওয়া ছাড়া করার ছিলই না কিছুই।
এরপরই ঘটল সেই একই ঘটনা- লিটন দাস এলেন আর চলে গেলেন! সিরিজ জুড়েই লিটন যা করেছেন! সাউদির দুর্দান্ত ক্যাচের হাইলাইটসও বোধ হয় দেখানো শেষ হয়নি তখনো, লিটন ফিরলেন গোল্ডেন ডাক মেরে, বোল্ড হয়ে।
নাঈম বাউন্ডারি মারলেন এরপর, কিন্তু যে পরিমাণ ডট খেললেন তাতে আবার তার টি-টোয়েন্টি সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিনি তাও যা একটু পারলেন, এরপর আর কেউ কিছুই করতে পারলেন না। উইকেটে আসো, ক্রিজে দাঁড়াও, ইচ্ছে হলে কয়েক বল খেলো, তারপর আউট হয়ে চলে যাও- এটাই বাকি ইনিংসের চিত্র।
বাংলাদেশ তাই ম্যাচ হেরে গেল ৬৫ রানে, ১০ ওভারে ৭৬ রানে অলআউট হয়ে। সিরিজে হলো হোয়াইটওয়াশ, যেমনটা হয়েছিল ওয়ানডে সিরিজেও।
এমএইচ/এটি/জেএস
