জোহানেসবার্গ নাকি বার্মিংহ্যাম, কলকাতায় কোন স্মৃতি ফিরবে?

লম্বা ক্রিকেট যুদ্ধ পেরিয়ে এবার শেষের প্রান্তে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ৪৮ ম্যাচের এই বড় প্রতিযোগিতায় আর বাকি দুই ম্যাচ। ফাইনাল এরইমাঝে নিশ্চিত করে ফেলেছে স্বাগতিক ভারত। আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দুপুরে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া। কলকাতার বিখ্যাত ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে দুই দলের এই মহারণ।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে এখন পর্যন্ত ১০৯ ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ৫৫ ম্যাচে জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। আর ৫০ ম্যাচে জয় এসেছে অজিদের ভাগ্যে। টাই হয়েছে ৩ ম্যাচ। ১ ম্যাচে আসেনি কোন ফল। তবে এই ১০৯ ম্যাচের মধ্যে দুটি ম্যাচ আলাদা করে ক্রিকেট ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। বলা চলে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা দুই ম্যাচ খেলেছে এই দুই দল।

১৯৯৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। বার্মিংহ্যামের আলো ঝলমলে দিনে আগে ব্যাটিংয়ে অজিরা। শুরু থেকেই অজিদের নাস্তানাবুদ করলেন দুই পেসার শন পোলক আর অ্যালান ডোনাল্ড। তবু স্টিভ ওয়াহর ৫৬ আর মাইকেল বেভানের ৬৫ রান মান বাঁচায় অজিদের। তবে এখানেও মিশে আছে বিতর্ক। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ফিল্ডার হার্শেল গিবস কি করে যেন মিস করে বসেন স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ। দুই যুগ পরে এসেও যে ক্যাচ বিষ্ময় জাগায়। শেষ পর্যন্ত শেন ওয়ার্নের ছোট ক্যামিওতে প্রোটিয়াদের সামনে টার্গেট হয় ২১৪।
হার্শেল গিবস, জ্যাক ক্যালিস, হ্যান্সি ক্রনিয়ে, গ্যারি কারস্ট্যান কিংবা জন্টি রোডসদের এই রান টপকানো যেন বিষয় ছিল না। তবে অপরপাশে যে ছিলেন শেন ওয়ার্ন! পুরো ১০ ওভার চাপে রাখলেন প্রোটিয়াদের। ২৯ রানেই নিলেন ৪ উইকেট। তবে ক্রিজে ছিলেন জুলু খ্যাত ক্লুজনার। ৪ বলে দরকার ১ রান। সেখান থেকেই রান আউটের শিকার ডোনাল্ড। টাই ম্যাচে সুপার সিক্সে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। অনেকের মতেই এটি আজও ক্রিকেট বিশ্বের সেরা ওডিয়াই ম্যাচ।

পরের ম্যাচটা ২০০৬ সালের ১২ মার্চ। জোহানেসবার্গে সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি দুই দল। রিকি পন্টিংয়ের ১৬৪, সাইমন ক্যাটিচের ৭৯, গিলক্রিস্টের ৫৫ আর মাইকেল হাসির ৮১। ওয়ানডে ইতিহাসের সেই সময়ের রেকর্ড ৪৩৪ রান করে বসে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়া জিতবে এমনটাই ধারণা সবার।
এরপরেই যেন বিষ্ময়ের দ্বিতীয় পর্ব। গ্রায়েম স্মিথ আর হার্শেল গিবস মারমুখী ভঙিতে যোগ করলেন ১৮৭ রান। স্মিথ ফিরলেও অবিচল গিবস। মাঝে ডি ভিলিয়ার্স আর ক্যালিস ফিরে গেলেও থামেনি রানের চাকা। ওভারপ্রতি ১০ করে রান তুলেছেন। গিবস ১৭৫ রানে ফিরে গেলেও ভ্যান ডার ওয়াথ আর মার্ক বাউচাররা ঠিকই গড়লেন ইতিহাস। ৪৩৪ টপকে ৪৩৮ রান করলো দক্ষিণ আফ্রিকা! একদিনেই দুবার হলো বিশ্বরেকর্ড।
কলকাতার এই ম্যাচে তেমন এক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা নিশ্চয়ই করতে চাইবে দুই দল। পুরো বিশ্বকাপে ব্যাটে বলে আলো ছড়িয়েছে প্রোটিয়ারা। কুইন্টন ডি কক, এইডেন মার্করাম, হেনরিখ ক্লাসেন প্রত্যেকেই আছেন ফর্মের তুঙ্গে। আর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্যাট হাতে প্রস্তুত গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, স্টিভেন স্মিথরা।
বোলিং বৈচিত্র্যেও পিছিয়ে নেই দুই দেশ। স্পিনে ওয়ানডের সেরা বোলার কেশব মহারাজ হবেন অজিদের দুশ্চিন্তা। আবার অজি স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা কেড়ে নিতে পারেন প্রোটিয়াদের ঘুম। সঙ্গে পেস বিভাগে ঝড় তুলতে পারেন রাবাদা, মার্কো জানসেনরা। আর অজিদের হয়ে কামিন্স, হ্যাজেলউডরা তো আছেনই।
বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া এই ক্লাসিক লড়াইয়ে কে জয়ী হবে, সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে শেষ পর্যন্ত। তবে, মাঠে নামার আগে কিছুটা হলেও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে এগিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। দুই দল এর আগে দুবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। আর সেই দুই ম্যাচেই যে জিতেছে অজিরা।
জেএ