হার্ভার্ডের চাপ কাটাতে এসে ২০ চালে জিএম বধ

দাবা ফেডারেশন মাঝে মধ্যে আন্তর্জাতিক রেটিং দাবা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। এতে পেশাদার-অপেশাদার অনেক দাবাড়ু অংশ নেন। চলমান ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবায় অংশ নেওয়া মোর্তুজা মাহাথির ইসলাম তেমন এক সৌখিন দাবাড়ু। সেই মাহাথীর গতকাল ২০ চালে বাংলাদেশের তৃতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তারের বিপক্ষে জয় পেয়েছেন। যা দাবা অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
চার বছর ধরে অনিয়মিতভাবে রেটিং টুর্নামেন্ট খেলা মাহাথির দাবা অঙ্গনে নতুন নাম। প্রথমবারের মতো কোনো গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারিয়ে তাই বেশ ঘোরের মধ্যে আছেন তিনি- 'সত্যি বলতে অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। কোনো গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারাব এটা ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তবে আমি যতটা না খুশি এর চেয়ে আমার মা বেশি খুশি হয়েছে।’ মাহাথিরের বাবা ঢাকা কর অঞ্চল-৬ এর ট্যাক্স ক্যাডার। সিভিল সার্ভিসে চাকুরি করা বাবাও ছেলের দাবায় যথেষ্ট সহায়তা করেন।
মাত্র ২০ চাল পর গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত খেলা ছেড়ে দেন। এই পরিস্থিতি হওয়ার ব্যাখ্যা করলেন এই দাবাড়ু–, 'তিনি আমাকে আউট প্লে করতে গিয়ে নিজেই আউট প্লে হয়েছেন। উনি একটা ভুল করেছিলেন, আমি এর পূর্ণ ব্যবহার করেছি। ফলে খেলা যে পরিস্থিতিতে ছিল তাতে তার জেতার কোনো সুযোগই ছিল না। তাই ২০ চালেই খেলা ছেড়েছেন তিনি।'
দাবা অঙ্গনে দীর্ঘদিন দাবা ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক আরবিটার হারুনুর রশিদ সাম্প্রতিক সময়ে ২০ চালের মধ্যে দেশি গ্র্যান্ডমাস্টারদের খেলা ছাড়ার ঘটনা স্মরণ করতে পারলেন না। স্মৃতি হাতড়ে বললেন, 'গত কয়েক বছরের মধ্যে কোনো জিএমের এমন ঘটনা মনে পড়ছে না। এর আগে হয়তো এর চেয়েও কম থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে মনে নেই। অনেক গেমে ২৫ চাল পর্যন্ত শুধু ওপেনিং হয় আবার অনেক গেমে ১৫-২০ চালে খেলা মধ্য পর্যায়ে যায়। গেম টু গেমে ভিন্নতা রয়েছে।'

ঢাকা কলেজ থেকে সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা মাহাথিরের এই টুর্নামেন্ট খেলার কথাই ছিল না। এই টুর্নামেন্ট খেলার নেপথ্যে কারণ বললেন, 'আমেরিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছি। আমার একাডেমিক রেজাল্ট, আইএলটিএস ও স্যাটের যে স্কোর তাতে ডালাস ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব। আমার ইচ্ছে হার্ভার্ডে পড়ার। হার্ভার্ডের ফলাফল পেতে আরো এক সপ্তাহ বেশি লাগবে। সেই ফলাফলের চাপের চিন্তা কাটাতে এই টুর্নামেন্ট খেলছি।'
বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের কাছে কিছুদিন অনুশীলন করেছেন। মাহাথীরকে বেশ মেধাবী দাবাড়ু আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, 'সে একাডেমিক ছাত্র হিসেবে যেমন একনিষ্ঠ তেমনি দাবাড়ু হিসেবেও। দাবা সিরিয়াসলি নিলে সে অবশ্যই অনেক বড় খেলোয়াড় হতে পারবে।’ গুরু এমন মন্তব্য করলেও মাহাথীর শখ হিসেবেই দাবাকে নিতে চান, 'পড়াশোনার প্রাধান্যটাই বেশি। আমি আমেরিকাতেই পড়াশোনা করব এবং সেখানেও সময়-সুযোগ পেলে দাবা খেলব। পেশা হিসেবে কখনো নেয়া হবে না। ১৮০০ রেটিং হয়ে গেলেও এখনো ক্যান্ডিডেট মাস্টার হইনি।'
এজেড/এইচজেএস